নোয়াখাইল্লা কবিতা
.........................

খাবনামা


খৈয়া হাতা, বনআডিয়া, কাঞ্জাল, আদামকূনি
লোনা হাগের খুঁডি লইন্না আগা আর চৈঁ এর হুকনা ভাজি দানা-
মা’র আতের হাঁচন গো বইন কি হোয়াদ লাগে!


বাইজান খাইজান হাঁচন আর দুগা ডাইল ভাত


আঁরে হিয়াও না মাগো মসুরী, খেসারী ডাইলের বড়া
বিলাতি দইন্যার হাতা আর হরুয়ার তেল..
হেলনের ডাইল আর নাইক্কলের তরকারী
.
মাঝেমইধ্যে খান লাগে গন্দবাদালির বড়া
হেডের বিত্তে বুডুর বাডুর হোয়ালে চলি যায়


চবি আঁকে মা’র মুকখান দইনের বিঁডাত দালাল খায়রাত আত্ও
চশমা চোক্অ গুনগুনগুন হড়া...
চবি আঁকে মার মুখখান হুইরের গাঁডের ঠেঙ্গার উপ্রে
চবি আঁকে স্কুলে যানের সময় গরম বাতে বিছনের বাতাসে
মাগো তুই আইজ কিল্লাই আঁর খাব আর খাবনামা
মাগো বেগ্গিন খালি খালি লাগে...

হলাহলি


জলার হাড়ে আন্তা হাতা থায় রাইত দিন
আটকাইন্না মাছের লাইন লাগে নিজেরে
মন উড়ি যায় আউলাইন্না বাতাসে
দান- দইন্নার গন্দে বরি থাইন্না তোর কউচ্ছা গামছা উড়ে
উড়ির চরের লাইন বুকের বিত্তে হোঁত করি উডে...


জিঙার লাই আঁর যীবন দিতাম হারি
কইলজার লগে বান্দি রাখতাম হারি না কিল্লাই?
কোনমি হিজ্জার হরান দোড়ে!
আঁর বালোবাসারে খড় খড় লাগে
আঁর দিনরে রাইত লাগে
হিজ্জা হলায় দইন হাঁতরের হইকের লাইন,
দূর মি যাইতো হরহরায়...


হরমুলের বিঁড়ার লগে বান্দি রাখছি আঁরে
ছোডকালের হলাহলি একুলেই বন্দি অইছে
আমের ডেঙ্গা, জামের ডেঙ্গা, তালতলা ও গাঁছির বাসা
ছঁই ও বরি হাড়ার টোঁডাগা আগাই দেনের লগেদি চোউক মারামারি
ডেঙ্গার বিত্তে দারুয়া টোগাটুগি
হুইরো হাঁচ্ছুরের দাপ্পুস দুপ্পুস
হোরগার বিত্তে মাছ আতাআতি
কে মনে রাখতো!
বেগ্গিনের বিত্তে আঙ্গো ছোডকাল অনও খেলায় হলাহলি.


অনুবাদ


লুকোচুরি
.
জলার পাড়ে আন্তা পাতা থাকে রাতদিন
বন্দী মাছের মতো মনে হয় নিজেকে
আউলা বাতাসে মন উড়ে
ধান ধনিয়ার গন্ধে তোর সবুজ গামছা উড়ে
উড়র চরের মতো শূন্যতা জেগে থাকে বুকে
জীবন দিতে পারি যারে কেন তারে বেঁধে রাখতে পারি না কলিজায়
তোর প্রাণ কোন দিকে উড়ে
আমার প্রেম খড়ের মতো মনে হয়
আর আমার দিনগুলো রাত হয়ে যায়
তু্ই পালাস দক্ষিন ক্ষেতের পাখি
দূরে যেতে ছটফটাস


পাটকাঠির আঁটিতে বেঁধে রাখি মন
ছোটবেলার লুকোচুরি দিন এখানে বন্দী
আম বাগান, জাম বাগান, তালতলা গাঁছির বাসা
সিম ও বর্ই পাড়ার কঞ্চি এগিয়ে দেয়া আড়চোখ বিনিময়
বাগানে খড়িকাঠি কুড়ানো দিন
সাঁতারের দাপুস দুপুস
হোরগায় মাছ হাতানো
কে মনে রাখে!
এসবের মাঝে শিশুকাল আজও লুকোচুরি খেলে...



মাইনস


দুখের দিনরে উড়াই দিছি দানের চিঁডা উড়ানোর লাইন
ঘুরাইন্যা বাতাসের বিত্তেও গাব গাছের লাইন খাড়াই থাই
মনের তলে হাঁছুর কাডে রঙিলা মাছ আর গুঁড়ি উড়ে গই
বিঁডা হালাই শরের চক্করে বেছইন চক্কর মারি কিল্লাই
ঠেঙের মাডি টোগাই
দেশরে বিদেশ বানাই বৈদেশরে দেশ


খালি বিল্ডিং দেই, ঠমক দেই মাইনস তো দেই না...


অনুবাদ


মানুষ


দুঃখের দিন উড়িয়ে দিয়েছি ধানের চিঁটা উড়ানোর মতো
গাব গাছ সটান দাঁড়িয়ে থাকি ঘূর্ণি হাওয়ায়
মনের অতলে সাঁতার কাটে রঙিন মাছ আর ঘুড়ি উড়ে
ভিটি ফেলে শহরের সাথে বেহুশ চক্কর চলে তবুও কেন যেন
পায়ের তলার মাটি খুঁজি
দেশকে বিদেশ করি বিদেশকে দেশ
শুধু পাকা বাড়ি দেখি সারি সারি, আর মানুষের অহংকার
মানুষ তো দেখি না......



মা
....
"কার বাচ্চা কইতাম গো মা কত জনের লগেই তো হুতি!"
হুয়ারি ডেঙ্গা, দান ও দইন্যার ক্ষেঁত গলাই গলাই আঁডে হেড
গুইল নাকি হাঁপ হেডে মোচড় মারে, কইলজা  আঁচড়ায়!
মোটরের ডাইল, ঢেঁইরহাগ,  চাইলতা ন গাব তলা
টোয়া বাগানের হিঁছেত্তন জানের হাঁউক্কা দি নামে
আর বিড় বিড় করে ঠোঁড-  
'হেডের বিত্তে  কে গো বড় বাইর মিয়া সাব আঁর লগে?'
মিয়াসাবের বিবিরা নাক বিটকায়
'রানির ডঙ্গে চাল বেহাইয়া বেশরম মাইয়া মাইনস! '
'মাইয়ারা মাইনস নাকি কোন দিন কুন গা সমাজ মাইনছে!'
শরমে বরমে মাইয়া বিচরায় খানার দানা
খুদ, জাউভাত, বাতের হেন যা থাক দেন
শরম বরম লই কোনাই যাই হেডুলা বেগানা!


এক কে হড়ী বোলায় আর কে ননদ
ওষের ঝিনুক হারা গাত,  গজবইয়ের লাজ চোখ
হলির গোডার রঙে মনের অইলদা অয় বেগুনি বাখান
আলতা আলতা আঁচল জোলে
থ্যাকথ্যাকে থোকথোক খালি কাদামন
লম্বা গোমটা অই হওরদের কদমবুচি করে ...
জোর করে দেয় কারো বাতের হাতিলো আত
গোস্তের আড্ডি বাঙে মটমট কটকট কুট
মাচানের তলাত্তন পাকনা-কাঁচা  আম টানি খায়
গালি ছিঁডায় কারও মুখে কারো নাকে নরম আদর।
রাইতের আঁন্দার হেড রসই ন দারুয়ার গর
সোয়ামি ও হোলারা নিত্তিকালে মজা আঙরায়...



অনুবাদ
মা
...
"কার বাচ্চা কইতাম গো মাই কত জনের লগেই তো হুতি!"
সুপারি বন, ধান ও ধনিয়ার ক্ষেত গলিয়ে গলিয়ে হাঁটে পেট
গিরগিটি কী সাপ পেটে মোচড় মারে, কলিজা  আঁচড়ায়!
মটরশুঁটি, ঢেঁকিশাক,  চালতা বা গাব তলা
টোয়া বাগানের পিছ থেকে জানের হাউক্কা তি নামে
আর বিড় বিড় ঠোঁট  
' পেডের ভেতর  কে গো বড় বাড়ির মিয়া সাব আঁর লগে?'
মিয়াসাবের বিবিরা নাক ছিঁটকায়
'রাণীর ঢঙ্গে চাল বেহায়া বেশরম মাইয়া মানুষ! '


'মাইয়ারা মানুষ নাকি কবে কোন সমাজ মেনেছে!'


শরমে বরমে মাইয়া বিচরায় খাবারের দানা
খুদ, জাউভাত, ভাতের ফেন যাই থাক দেন
শরম বরম নিয়া কই যামু  পোয়াতি বেগানা!


এক কে শাশুড়ী ডাকে আর কে ননদ
শিশিরের ঝিনুক সারা গায়,  ডুমুরের লাজ চোখ
পুঁইয়ের গোটার রঙে মনের হরিদ্রা হয় বেগুনি বাখান
আলতা আলতা আঁচল ঝোলে
থ্যাকথ্যাকে থোকথোক খালি কাদামন
লম্বা ঘোমটা হয়ে শশুরদের কদমবুচি করে ...
জোর করে দেয় কারো ভাতের পাতিলে হাত
গোস্তের হাড় ভাঙে মটমট কটকট কুট
মাচানের তলা থেকে পাকা-কাঁচা  আম টেনে খায়
গালি ছোঁড়ে কারও মুখে কারো নাকে নম্র আদর।


রাতের আঁধার পেটে রসই বা লাকড়ির ঘরে
স্বামী ও পোলারা নিত্তি মজা নিংড়ায়...


(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে)