পরবাসী
খাতুনে জান্নাত
.........................


বাংলাদেশে এসে বন্ধুর খুঁজছি ঠিকানা
আমি তো ফেলে এসেছি বয়স
ওরা কি বারুদের ভারে নতজানু ঝাউগাছ
হারিয়ে ফেলছে দাঁড়াবার কসরত
খৈ রঙা বিকেল মনমরা হয়ে রাস্তায়
বাতাসে ঘি-পোড়া গন্ধ
নদীর বুকে চামড়া-পচা নাদ
কিছুই নেই আগের মতো
কবিতার পঙক্তি ঝুলছে  বিদ্যুতের তারে..


যাদের সাথে বিনিময় করে যেতে চাই বিনির্মাণের লব্ধ কারুকাজ
স্রোতের উজানে দাঁড় বাইবার কারিশমা
কাউকেই খুঁজে পেলাম না
সড়ক এবড়ো-থেবড়ো, কঙ্কর, রড, সিমেন্ট, ইটের সারি, অযাচিত খানাখন্দ
অচিন পাখিরা রমনার গার্ডেন থেকে আড়চোখে দেখাচ্ছিল মায়া...
ও পাশে শহীদ মিনার জুতা, সেন্ডেল, ফলের খোসা, প্যাকেট--
সভা পণ্ড হওয়ার কঙ্কাল ছড়ানো ছিটানো!


শহর ঘুরতে ঘুরতে খুঁজি প্রিয় সুহৃদের মুখ
ফ্লাইওভার একে অন্যকে ছাড়াবার কসরতে;
উঁচু দালান পাশে মুমূর্ষু মা ও বিক্ষত কুকুর ছানা
গরম বাতাস, ধুলা আর এয়ারকন্ডিশন ঘরে নির্জন শোপিচ
শোবিজের চুলগুলো দামী গহনা পরে হাত বাড়ায়
শহরের পীচঢালা পথ, সাহিত্য-কীর্তন নিঃসঙ্গ আমার মতোই
মুখে ভারী মেকআপ লাগিয়ে যে বন্ধুটি বিয়ের আসরে
নতুন বৌয়ের মতোই বারবার জীবন সাজায়
যে স্বামী বিশ্বাস ঘাতকতার নখর বসিয়ে গেছে
তা ঢাকতে প্লাস্টিক সার্জারি টেবিলে...


পরিচয় খুঁজতে পুরুষ বন্ধুটি নিজের সাথে লিপ্ত মল্ল যুদ্ধে,
দ্বন্দ্বযুদ্ধ কাতর বাতিকগ্রস্ত, পরপুরুষ সমকামীদের আঁক্‌ড়ায়
ব্যবহৃত হতে হতে কর্পুরের মতো উবে যেতে থাকে...


গ্রামের নিস্তরঙ্গ পুকুর, শুকনো  পাতার মর্মর,
রাঙা চাচী, বিধবা ভাবির সাদামুখ
নিশ্চিন্তে হেঁটে বেড়ানো  লেবু ফুলের মদিরতা
এসব ছাড়া থ্যাঁতলানো স্মৃতির  ক্যানভাস জুড়ে বন্ধুর এসিডদগ্ধ মুখ
আফিং, কোকেন, গাঁজামুখী তারুণ্য
সড়কের দু ধারে বন্দুকের মহড়া
বন্ধুদের ছেড়ে যাওয়া পরিত্যক্ত বাড়িতে ইঁদুর বসতি
আত্মীয়ের হলুদ চোখ আর বাদুর-ঝোলা রাত
বোনদের সম্পত্তি দখলে ওঁৎ পেতে থাকা ভাই
মা-বাবার কবর আর ডাহুকীর আর্তনাদ


মুখ ফিরিয়ে নেয়া বন্ধুদের অবহেলার লাশ ব’য়ে
প্রিয় বাংলাদেশের বেতফল, বুনো কুল কোঁচড়ে  
ঘুরে বেড়াই গ্রাম থেকে শহর-- শহর থেকে গ্রাম--