রূপসী
কাক ডাকা ভোরে বাড়ির উঠানে
হৈ হৈ রব নাই
চাঁনখালীর তীরে অনেকক্ষণ একা দাঁড়িয়ে থাকি
মনে কোন অনুভূতি জাগে না
আগেকার নদীর স্রোতে
কলকলনিনাদ তোমার সুরে
স্নিগ্ধ হাওয়া পরশ তোমার
ছুঁয়ে দিত;
ইদানীং স্রোতগুলো স্বার্থান্বেষী হয়েছে।
রূপসী তোমার খুঁজে
দিনদুপুরে
হটাৎ করে
হঠাৎ বিলে,
হঠাৎ চরে,
বনবাদাড়ে
চলে যেতাম; কতদিন যাই নি
প্রকৃতিতে তুমি আর নাই বলে!


বিকেলের আকাশে এখন
লাল, নীল, হলুদ, সবুজ
রঙের ঘুড়ি উড়ে না,
বসন্তের বিকেল এসেছে
গ্রীষ্মকালীন দুপুরের তিক্ততায়।


রূপসী, মানুষের কি অদ্ভুত মতিগতি
পেঁচাকে অভিসম্পাতের পাত্র বলেছিলো
সেই যেন মানুষের অভিশাপে নিখোঁজ হলো
শালিকেরা উড়াউড়িতে ইতি টেনেছে
চড়ুই আমার বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে
ইঁটপাথুরের ভিড় দেখে,
কাকের কণ্ঠে কর্কশতা খুঁজতে যাওয়ায়
কাক রাজ্যের লজ্জা নিয়ে
ফাঁসির দড়ি বেঁধেছে গলায়।
মানুষের গুলির শব্দে বাদুড়েরা কর্মবিরতির নামে
যেন জীবনবিরতি দিয়ে গেল!
বিকেলের আকাশে যখন তাকিয়ে দেখি
আমি হরেক রকম পাখির
আপন নীড়ে ফিরে যাওয়া দেখি না।
সকালবিকাল আমার বাড়ি দুই শালিক অতিথি হতো,
শহর থেকে ফিরে তাদের খোঁজ.. আর পাই নি।
একটি বসন্তে অপেক্ষার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলাম
গায়কপাখি গান শুনাবে বলে।
হয়তো গেয়েছিল আমায় শুনায় নি।
হয়তো শুনতে পায় নি। নাকি কেউ শুনে নি!
রূপসী তুমি কি শুনেছ? জানো,
পাখিহীন গাঁ মানে সুরহীন গাঁ;
সুরহীনতা যেন প্রাণহীনতা
প্রাকৃতিক সেই সুরের অস্তিত্ব কি
কৃত্রিমতায় মাতে?


আমি আগামী প্রজন্মে আর আসবো না,
এই আধুনিক কৃত্রিম অমানবিক শহরে
আমি উপযোগী নই।
আমি ফুল হয়ে ফুটতে চাই অতীতের বাগানে
রূপসী যেখানে তোমার অবস্থান
তোমার অস্তিত্ব বিদ্যমান
যেখানে সুন্দরতার আভাস আছে
যেখানের সবুজ পাতা হৃদে ভালোবাসা বুনে
যেখানে সুরের পাখি ভালোবাসার বার্তা শুনায়
যেখানে জীবনের মতো
সুর, গান, গন্ধ, হাওয়া এবং ছায়া সব প্রাকৃতিক।

চাঁনখালী, চন্দনাইশ
১২ চৈত্র ১৪২৬ বঙ্গাব্দ