বিশদে প্রতীকীবাদ


আমার ৯/৯ লেখা “প্রতীকীবাদ” পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে মার্শাল ইফতেখার আহমেদ মহাশয় আমাকে বিষয়টি সম্বন্ধে বিশদ ব্যাখ্যা পরিবেশন করতে বলেছিলেন। সেই উদ্দেশ্যেই আমার এই লেখা। আমি তাত্ত্বিক নই। তবে বিভিন্ন কবিতা পড়ে এবং নিজেও লিখে প্রতীকীবাদ বা সিম্বলিজম (symbolism) সম্বন্ধে কিছু ধারণা পরিবেশিত করবো। প্রথমে একটা সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করবো। তারপর অন্য লেখকের কিছু কবিতা বা কবিতার অংশ তুলে ধরবো। শেষে আমার লেখা কবিতাও থাকবে।
 
কবিতায় প্রতীকীবাদ অর্থ কোন শব্দ, বাক্যাংশ বা বাক্যের পরিবর্তে অন্য কোন শব্দ, বাক্যাংশ বা বাক্যাংশ ব্যবহার করা। আবার শব্দ, বাক্যাংশ বা বাক্যটির উল্লেখ না করেই লেখার মাধ্যমে তার আসল অর্থ প্রকাশ করা। কয়েকটি উদাহরণ দিইঃ
 
ওয়ার্ডসওয়ার্থের লেখা “দর্শনেই হৃদয় উদ্বেলিত হয়”
 
উদ্বেলিত আমার হৃদয়
আকাশে যখন রামধনু রয়।
জীবনের শুরুতে ছিল এমন
তেমন আমি সাবালক যখন
তেমনি হোক বৃদ্ধ কালে
মৃত্যু আসুক তা না হলে।
 
পি বি শেলীর “চাঁদকে”
 
আকাশে উড্ডীন হয়ে
তাকিয়ে পৃথিবীর দিকে
বিবর্ণ তুমি ক্লান্তিতে
সাথীহারা পথে চলে
ভিন্নজন্ম তারাদের দলে
বিমর্ষ চোখে সতত বদলে
স্থিরতার অর্থবহ
কিছু পড়ে না চোখে।
 
দি আর্চপোয়েটের “তার স্বীকৃতি”
 
আমার তিক্ততার মাঝে
ক্ষোভের হিংস্রতার সাথে
অন্তর্মুখীন উত্তেজনায়
শোনো আমার ঘোষণায়।
এক উপাদানে আমার সৃষ্টি
পদার্থের উচ্ছৃঙ্খলতা
বিবর্ণ পাতার মত যথেষ্ট
সহজেই হাওয়ার ছড়িয়ে পড়া।


ফরাসী কবি জাক প্রেভের-এর "জীবনের বিস্ময়"


ফাঁদের দাঁতে আটকে
একটা সাদা শেয়ালের থাবা।
বরফের উপর রক্ত
সেই সাদা শেয়ালটার।
আর বরফের উপর
সাদা শেয়ালটার পায়ের ছাপ।
সে তিন পায়ে হেঁটে পালিয়েছে।
সূর্য অস্ত যায়।
শেয়ালের দাঁতে আটকে একটা ইঁদুর,
এখনও জীবন্ত।
 
আমার লেখাঃ
 
স্বার্থপরতা
 
সিলিং-এ দুলছে পাখা
ফটোর ফ্রেম পড়ে চুরমার
রাস্তায় আমরা সবাই
হয়তো তুমি
হয়তো না
ডানদিকে ফাটল
বামদিকেও দেখা দিল
তবু তোমার হৃদয় নিঃস্পন্দ
 
চিরন্তন স্বার্থপরতা
 
তুমি হয়তো বেঁচে যাবে।
 
আলপনা
 
ফুলে মধু নেই
সব গেছে মৌচাকে
হাত কাজ নেই
পড়েছি বড় বিপাকে
কাজ যাও পেলাম
প্রয়োজন মেটে না
মৌচাকের গায়ে দেখ
আগুনের আলপনা।  
 
আমি বিষয়টা পরিষ্কার করতে পারলাম কি না জানাবেন।
 
পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জি।