ঝুলন
 
শিশু আছে, শৈশব নেই।
কেন নেই?
অস্কার ওয়াইল্ডের দৈত্য তো আসেনি,
স্বার্থপর বাবা-মায়েরাই
সেই দৈত্যরূপী শৈশব-চোর।
আগে তো দিব্বি শৈশব ছিল-
কানামাছি, চোর-ডাকাত,
ডাংগুলি, গুলি, লাট্টু, গুলতি,
শোলোক বলা দিদি, ঠাকুরমার ঝুলি।
এক এক করে সব চোরেরা
নিয়ে অদৃশ্য করে দিয়েছে।
দয়ামায়াহীন জন্মদাতারা,
জন্মের পর থেকেই
শিশুকে এক ধাপে বানিয়েছে
বুড়ো, সাথী এক খুড়োর কল-
পিঠে চার কেজির ব্যাগ,
হাতে জলের বোতল,
স্কুলের পাশে কোন বাড়ির বারান্দায়
বা পার্কে বা মাঠে মায়েদের জমিয়ে আড্ডা,
চপ-তেলেভাজা খাওয়া।
স্কুল ছুটির পর শুকনো মুখে
আবার কিছু গুজে দিয়ে কোচিং,
শিশুদের নিজের বলতে আছে
ভিডিও গেম, খুব বেশি হলে
আঙুল নাড়িয়ে আজব ক্রিকেট
মেট্রোয়, স্টেশনে রোজই দেখি,
দেখি শিশুদের মুখে এক যান্ত্রিক খুশি।
 
মিউজিয়ামের মমির মত
শৈশবের ভাণ্ডারের তলায় পড়ে আছে
ঘুড়ি ওড়ানো আর রথযাত্রা।
তাও বাবা-মায়ের নজরদারিতে।
বুড়ো আংলাগুলো এখনো এই দুটো
টিকিয়ে রেখেছে-
পোড়ো বাড়ির ধ্বংসাবশেষের মতো-
তাই শৈশব ছিটেফোটা পায়।
 
জন্মদাতাদের পরবগুলো
দিব্বি টিকে আছে, যেমন-
শিবরাত্রি, প্রবাদের সলতের মত নয়,
বাঙালির মহোৎসব বলা যায়,
অনেকের বাণিজ্য হয়।
আর প্রতি শনিবার
শনির মন্দিরে মানুষের সমুদ্র।
যান্ত্রিক বাবা-মা
মিষ্টির প্যাকেট আর মালা জমা দিয়ে
শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আদায় করতে চায়।
 
শিশুদের চোখ তখন
টিভি বা কম্পিউটারের পর্দায়।
দু চোখে কোন বিশ্রাম নেই,
অন্য দিকে জড়বৎ চর্বির চাষ।
 
আসল কথাটা শেষে বলি।
শিশুদের একটা উৎসব ছিল-
যা এখন শুধু পঞ্জিকা,
বাংলা ক্যালেন্ডার আর অভিধানের পাতায়।
একদিন সব বাড়িতেই এক চিলতে
বারান্দা ছিল। তাতে শিশুরা
ধুমধাম করে পাহাড়, নদী বানাতো,
পুরনো পুতুল সাজিয়ে গড়ে তুলতো,
এক চিলতে গ্রাম বা শহর।
উপরে দড়িতে দোল খেত
বুড়ি রাধা আর বুড়ো শ্যাম,
পুরো পাঁচ দিন ধরে চলতো
এই শৈশবের মহোৎসব।
এখন অনেক বাবা-মায়ের
স্মৃতিতেও হয়তো পাওয়া যাবে না।
 
ঝুলন, ঝুলন পূর্ণিমা- ডাকাতি হয়ে গেছে।
 
জীবনের ঝঞ্ঝাবিধ্বস্ত দোলায়
মাঝে মাঝে অনেক অসহায় শিশু
ঝুলন্ত দড়িতে হারিয়ে যায়।
 
জানিয়ে দেয় ঝুলন উৎসব ছিল।