ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল বড় হবো একদিন,
স্কুলের মাঠের দেয়ালে এক-পা ঠেস দিয়ে,
সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়বো ভুস ভুস করে,
থোড়াই পরোয়া করবো কে কি বললো তার।
আমার আর বড়ো হওয়া হয়নি,
প্রথমবার গোল্ডলীফ সিগারেটে দুই টান দিয়ে
চিৎ হয়ে পড়েছিলাম মন্টু মিয়ার দোকানের বেঞ্চিতে,
মাথা ঘুরে বমি করে ইজ্জতের ফালুদা একেবারে।
তখনই বুঝে গিয়েছিলাম বড় হওয়া আমার কম্ম নয়।
তবু ঘাড়ে চেপে বসেছিল বড় হবার সিন্দাবাদের ভূত।


ভেবেছিলাম, কলেজে উঠলে নিশ্চয় বড়ো হয়ে যাবো,
গাদা গাদা বই নিয়ে আর ক্লাসে যেতে হবে না,
প্যন্টের পেছনের পকেটে একটা খাতা গুঁজে,
বেপরোয়া ভাবে দাপিয়ে বেড়াবো কলেজের প্রাঙ্গণ।
আমার আর বড়ো হয়ে উঠা হয়নি,
পেটমোটা বইগুলো সঙ্গ ছাড়েনি আমার,
তার সাথে যোগ হয়েছিল বেঢপ টেস্ট পেপারস।
এ টিচার ও টিচারের বাড়ীতে প্রাইভেটে হারিয়েছি
অসংখ্য সোনালী বিকেলের মায়াবী রৌদ্রের আদর।
তখনও ভাবতাম, বড়ো হলে সব পাবো,
ঝাড়া হাত পায়ে ঘুরতে পারবো,
উদাস হয়ে সিগারেট টানতে পারবো,
বিকালের সোনালী রোদ ধরতে পারবো।
কিছুই পারিনি, আমার আর বড়ো হওয়া হয়নি।

ভেবেছিলাম, একটু বড়ো হলেই প্রেম করা যাবে,
গার্লস স্কুলে গেটের উল্টা পাশে দাঁড়িয়ে
লাল গোলাপ ছোঁড়া যাবে পছন্দের কিশোরীর দিকে,
কিনে দেয়া যাবে ভ্যান থেকে পাঁচটাকা দামের
পাঁকা কদবেল আর কাঁচা লংকার টক ঝাল ভর্তা।
আমার আর বড়ো হওয়া হয়নি,
ভালো লাগার কথাটি পাড়ার নতুন ভাড়াটিয়ার
মেয়েটিকে বলতে গিয়ে, পাগলা কুকুরের তাড়া খেয়ে
এঁদো ডোবায় ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলাম কোনোমতে।
তখনি বুঝে গিয়েছিলাম বড় হওয়া ভীষণ কঠিন কাজ,
আর যাই হউক আমাকে দিয়ে বড়ো হওয়া হবে না।


এখন মধ্য বয়সে এসেও মনে হয় বড়ো হতে পারিনি!
ছেলে মেয়েরা বলে, বাবা তুমি কিছুই বুঝো না,
আর গিন্নির কাছে আমি তো নিতান্তই অক্ষর জ্ঞানহীন,
বাবা বলেন, তোমার এখনো ম্যাচুরিটি আসেনি।
আমি এখনো জানি না কিভাবে বড়ো হতে হয়!
কত বয়স হলে প’রে সবাই বলবে বড়ো হয়েছি,
খাটিয়া করে সবাই যখন নিয়ে যাবে অন্তিম শয়ানে,
তখনো হয়তো অনেকেই বলবে বড়ো হইনি,
চলে গিয়েছি বড্ড অকালে।
ঢাকা- ০৩/১২/২০২২