বিঃদ্রঃ -:   ( “কালু মাখে কালি”- এই কবিতায় কালু এক কাল্পনিক নাম ।  যদিও স্বাধীনতা আন্দোলনে  স্বাধীনতা পেয়ে গেছে আমাদের দেশ, তবুও মনে হয় যেন এখনো পরাধীন দেশেই আমরা সবাই বাস করছি । এই কবিতায়  ওদেরকেই বলা হয়েছে “ যারা ” সমাজকে এক 'রাজনীতি' নামক খোলসে জড়িয়ে অত্যাচারিত করছে এবং নিংড়ে নিচ্ছে মানুষের স্বাধীন অধিকার । আমার এপার এবং ওপার বাংলাবাসিদের কাছেই এটি একটি সমাজ সচেতনতা মুলক কবিতা এবং একটি বিদ্রোহি মুলক কবিতা হিসাবে পরিচিত হবে, এবং আমার এই কবিতাটি- কাউকে তীক্ষ্ণ উদ্দেশ্য করে  বলা হয়নি  ।)



                         ( ১ )


ওই দিনটা- পাড়ার কাছেই স্বপ্নে ছিল মোড়া ,
স্বপ্ন তাদের ভেঙ্গেই গেছে, লাগবে না আর জোড়া ।
মাথায় হাত এখন পাড়ার-, ছেলে বুড়ো সবার
'কি লাভ বা বল তাতে- হয়েছে যা হবার' !
'যাদের জন্যই জনসাধারন বলি পাঠার মত
বলছি আজ কালু'র মতই- আছে এমন যত'... ।


সিধাসাধা, বলতে গেলেই- সবার-ই খাতির পেত,
আজব পাড়ার গাজব ছেলে কা’লু নামেই ক্ষ্যত ।


কালু, পাড়ার সেরার সেরা , কামে এবং নামে-
কালু একদিন বিক্রি হত দামের চেয়েও দামে ।
যোগ্য বলেই- পাড়ার লোকে ভালোবেসেই তাকে
আদরেতে কদর করেই-  অগ্রস্থানে রাখে ।
গাজব বলে –ওই ছেলে  ইলেকশনে দাঁড়ায়,
‘এবার কিছু হবেই হবে’! ভাবে পাড়ায় পাড়ায় ।
বসায় তাই- সেবক পদে অভাব ঘুঁচবে বলে,
কালু বলে, ‘ঘুঁচিয়ে দেবো ! মুখ্যমন্ত্রী হলে’- ।


-ওই গাঁয়ের জনা দশেক থাকত কালুর সাথে
ভুলিয়ে ভালিয়ে পটিয়ে নিত, অর্থ দিয়ে হাতে ।
কখনো আবার সন্মেলনে নামেই দিত ভাষন,
‘তোমরাও আমার মত, লড়লেই পাবে আসন’ ।
শিখতে হবে, ঘুরতে হবে থাকতে হবে সাথে
'মারপিটটা হলেই কিন্তু- হাতটা রাখো হাতে' !
‘আর্ট-বুদ্ধির উপকারেই’  -কালুই সদা রত
তবে, কালুর চালটা ছিল- মাকড়সার মতো ।


                      ( ২ )


চালটা তাহার এমনই ছিল আজব চালের পাশায়
দিনের আলো নিভলে ঘরে জ্বলবে আলো বাসায় ।
ঘর গুলো সব ইটের হবে লাগবে রঙ সাথে,
বাদের জমিন আবাদ হবে ফলবে ফসল তাতে ।
'নকরি হবে হাতের মোয়া' , ছেলে মেয়ের সবার
বিনামূল্যেই মিলবে সবজি, গ্রাম বাংলায় আবার !
হাসপাতালে মরবে না আর, বিনা সেবা পেয়ে-
‘মন্ত্রী হলেই- নিয়ে আসবে বিদেশ থেকে গিয়ে’ ।
‘অন্ন পেয়েই ধন্য হবে  -দেশের বৃদ্ধ-বৃদ্ধা
সবার আগে আমার থেকেই  পাবে ভীষন শ্রদ্ধা’ ।


পাড়ার লোক-তো সাধাসিধে , গ্রাম বলেই কথা-
জানতো কালু, আনতো তাই নিত্য নতুন প্রথা ।
তাইতো কালু পাড়ায় পাড়ায় দিনে রাতে যেত,
লোকের কাছে গিয়ে গিয়ে নানান আস্থা দিত !
একদিন তাই বিপুল ভোটে  জিতলো যখন কালু
ভাবতে লাগে পাড়ার লোকে-, সুখের দিন চালু- ।
স্কুল হবে, কলেজ হবে, হবে আরো কত ,
হাসপাতালে নানান ডাক্তার রইবে শত শত ।
জ্বলবে আরো ঘরেই আলো তেলের বাতি নিভে
স্বল্প মূল্যে বিজলি বাতি -কালুই এবার দিবে !
আরো কিছু আসবে নতুন , ভরবে সবার মন
রাঙিয়ে দেবে খুশির আলোয়, আসবে কালু যখন ।


                      (৩)


  (এবার পাড়ার লোক খুবই নিরাশ । কারন মন্ত্রীপদে কালুর অনেকদিন বসা হয়ে গেছে, কিন্থু কালুর দেখা নেই । তাই পাড়ার লোক বলে... )
  
অনেক দিনই হয়ে গেছে কালুর মন্ত্রী পদে,
কোথায় গেল কালু বাছা ! ‘রইনু আবার বাদে’ !
কালু এমন ছিল না তো , করছে তবে কেন?
যেটাই আজ চাইনি মোরা সেটাই হল যেন !


একদিন তাই  পাড়ার প্রেম গেল কালুর কাছে-
বলল আচ্ছা, 'কালু দাদা চাকরি কোনো আছে' ।
এই নাও আজ তোমার গড়া 'এইট পাশের ডিগ্রি'
ভীষন বিপদ ঘরেই আমার, চাই যে একটা শিগ্রি ।
আর কালুদা- ভোটটা নিয়ে ভুলেই গেলে না কি !
এটা হবে -ওটা হবে, আরো যে কত বাকি-- !
ভাবছে আজও পাড়ার লোকে, আসবে কবে কালু?
বলছে জানো, ‘ভুলেই গেছে -হাতে পেয়ে মাল্লু’ !
ভেবে ভেবে পাড়ার লোকে- নরকেই স্থান নিল
বলো কালুদা- আস্থা-টাস্থা কোথায় তোমার গেল ?
ভাবছ তুমি মুক্তি যুদ্ধে, নেইকি- আজ মোরা
আছি আছি! লড়বো দেশে থাকবে আরো গোরা ।
তাইতো মোরা সবাই মিলে স্থির করেছি এবার
আগেই যে- করবে সব, প্রস্তুতি নেবো দেবার !
তুমি আজ দেশের সেরা- , পাঁচটি বছর ধরে-
'হয়ত তোমার যাবে সময় নিজের সেবা করে' ।
ভুলেই গেছো জানি আমি । ‘ভোটগুলি সব নিলে-
মন্ত্রী হলে, ফলাফলে- ব্যর্থের ঝোলা দিলে’ !
ভালোই নাম ছিল পাড়ায় , বলত মুচি মালি
বলছে এবার ওরাই আজ- "কালুই মাখে কালি" ।
ধন্ন্যি তোমার রাজনীতি, ধন্ন্যি তোমার মন,
"আচ্ছা ভাই তোমরাই বল বাঁচবো এবার কেমন" ?