(১)
হবে অনেকদিন আগে-, হবে বৈশাখ কিংবা মাঘে,
লাগিয়ে ছিলাম দানির মাঝে একটি গোলাপ চারা ।
দেখি- সে জাগে , তাহার রাগে অনুরাগে,
তাইনা দেখে- হলাম আমি সত্যি পাগলপারা ।
নিলাম তাই পিছু, আমি ভাবলাম অনেক কিছু
ফোটার আগেই ফুটলো যেন আমার মনেই ফুল,
আসন তাই উচুঁ , তাহার নয়কো স্থান নিচু,
জল দিলাম তাতে, কারণ বাড়তে হাজার মূল ।
তারপর যে তাকে, রাখি রান্নাশালের বাঁকে-,
আসতে যেতে দেখা হত, হত আরো গল্প,
যাতে ভালো থাকে, আবার, বলি আরো মাকে
‘খেয়াল রাখো আমার মতো, খাবার দিও অল্প’ ।
সকাল থেকে শেষে, আমি থাকি তাহার দেশে
কারণ আমার ওইটি গীতা, ওইটি সকল বাণী
তাই ভালোবেসে-, তাকে আদর করে হেসে
নামটি দিলাম, আমার মনের ‘‘স্বপ্নের রাজ-রানী’’ ।


(২)
এবার, যাওয়া হবে আমার, যখন, ডাক এসেছে মামার;
মন চায়না তবু তাকে ছাড়তে হবে ভেবে-
বেড়া দিলাম ‘তামার’, যেন না হানে কেউ হামার,
তাই মালিরে- বলে গেলাম করতে তাহার ‘সেবে’ ।
আরো আমি বলি, ‘আজ, আমি গেলাম চলি’-,
কিন্তু ‘মানি’- আমার আদেশ, এর কিছু হলে
থাকবে না ‘মলি’, সে- যাবেই ‘কথোলি’!
এই আমি শেষ কথাটি গেলাম তোমায় বলে !
‘পরীক্ষারই বাস’ , সে তো- মাত্র একটি মাস
তারপরেতে সোজাসুজি আসবো তোমার কাছে,
গেলাম রেখে দাস, তুমি, ফেল দীর্ঘশ্বাস-
'একা নও রানী তুমি' মানিক’কা তো আছে !
এই বলেই আমি- হলাম, অনেক দূরগামী,
ছেড়েই দিলাম রানীর মতো আসল স্বপ্ন পাখি,
উত্তরে ওই ‘ভামি’, ছেড়েই- মামার ঘরেই থামি,
এই কটি দিন হয়তো আমার বুজবে না আর আঁখি ।


(৩)
আমার লাগছে যেন ‘কাল’, এই সন্ধ্যা আর সকাল,
মামার ঘরে , আমার যেন, একটি একটি দিন,
খুবই বুরা হাল, আমার লাগে না আর ভাল্,
মনেই পড়ে যায়গো সেই- রানীর দেওয়া ঋণ ।
যখন ছন্দ ছিল, তাহার দুইটি পাতা ছিল,
এখন বুঝি হয়তো আবার এসেই গেছে কুঁড়ি
হয়তো ‘মাছি’ নিল, সে- নিজেই বেড়া দিল,
যাওয়ার সময় নেবো তাই- ‘ভামির’ ছোটো নুড়ি ।
দেবো তাহার তলে, আমি নানান ছলেবলে,
যাতে সে তাড়াতাড়ি ফোটায় নিজের ফুল,
সেই- ফোটা ‘ফলে’, যদি আসে দলে দলে
মৌমাছি আর প্রজাপতি নিয়েই তাহার হুল-
শাসিয়ে দেবো তাকে, যাতে আমার রাণী’টাকে
মধুর নেশায় যেন কোনো আঘাত না হানে,
চুপটি করে থাকে, খাবে, কোমল কোমল ফাঁকে,
জানবে সেও, হয়তো আমার এমন করার মানে ।


(৪)
বেশ এগিয়ে এল দিন, সেই পরীক্ষারই সিন্,
ধীরে ধীরে ব্যর্থ তখন- আমার সহচরী,
কোথায় বাঘা যতীন! আজ, হল নাকি মলিন !
এরই হয়তো একটি কারণ, আমার স্বপ্ন-পরী ।
মামার ঘরেও যাহা, আমার, ক্লাসেও তাহা,
দিদিমনির মতেই- নাকি, আমি সুকান্ত-,
বন্ধু বলে আহা , তুই কেমনে বাছা-বাহা
সারাটাদিন কেমনে থাকিস হয়ে রে ভাই শান্ত !
মামি বলে আমি, নাকি- করছি ফাদলামি
বেফালতুই থাকি শুধু , আমার মামার ঘরে
খুবই অ-দামি, যেন, এইখানেতে থামি-!
নয়তো নাকি গোল্লা পাবো সাতটি দিন পরে ।
পরীক্ষাও শেষ হল, আর সাতটি দিনও গেল,
যেন আজও বাছার মাঝে বাঁচার তাগিদ আছে
সময় বয়ে গেল, ঠিকই- বিকেলটাও এল,
সেই বিকালেই সবই ফেলে এলাম সাথীর কাছে ।


(৫)
আমি বলব কি আর তা, আজ, বুকে হাজার ব্যথা,
যখন দেখি পৌঁচ্ছে আমি আমার হৃদয়টাকে-
শুকনো সব পাতা, আজ, ভাবনা যত বৃথা !
কাল কুঠিরে, লতাপাতায় আমার রানী ঢাকে ।
আরো, ধূলো জমে, তার গেছে আয়ু কমে
নবীন নবীন পাতা গুলো ঝরেই আছে নীচে,
এত পরিশ্রমে, যেটি- থাকতো পরিক্রমে
সেইটি আজ আধাই মরে বসেই আছে ‘বীচে’ ।
ডাক পাঠালাম মা-, মায়ের জবাব এল না,
আমায় নাকি সময় দিতে নেইতো মায়ের সময়
মালিই দিবানা ! কিন্তু-, পতির র্ভতসনা
ছেয়েই আছে, দানির মাঝে আমার পরিনয় ।
ভুলটা আমার ভাই, তাই দোষটা দেবো নাই-
সে আমার মা’ই হোক, কিংবা মালির বেশে
হোক না মানি’কাই, আমার ছোট্ট ভুলেতেই
রানী-ই আজ স্বপ্ন দেশে- ঘুমলো আবার শেষে ।



*********
০৪\০২\২০১৬
গুড়গাঁও, হরিয়ানা ।