দাদি যখন আফসোস করে বলতেন,
ছেলেটা যদি একটু দাঁড়াতে পারতো,দেখতাম
আমি দাঁড়িয়ে বললাম, দেকেন দেকেন দেকেন
তারপর থপাস
উঠোনে পরে চিৎকার করে বাড়ি আকাশে তুলি।
দাদুর কোলে জর্দার গন্ধ মাখানো আবেশে
নিজেকে হারিয়ে ফেলি। তখনই বুঝতে পারি-
উত্থানের সাথেই রয়েছে পতন
পতনের পর আবারো উত্থান
উত্থান-পতন, জোয়ার-ভাটা, আলো-ছায়া জীবনের অংশ।


দাদু বলতেন, হাঁটো দাদু হাঁটো
আমি হাঁটতে শুরু করি, এক কদম দুই কদম
পায়ের সাথে পা জড়িয়ে পড়ে যাই
আবারও কান্নার ঢেউ সাগরে আছড়ে পড়ে
দাদুর আঁচলে তরঙ্গের পর তরঙ্গ উত্থিত হয়
আমি তখনই বুঝতে পারি, উঠতে গেলে পড়তে হয়
উত্থানের সাথেই রয়েছে পতন।


তারপর হাঁটুতে বল এসেছে, দৌড়াতেও পারি
এখন আর মাটিতে দৌড়াতে ভালো লাগে না
গাছে উঠে ডালে ডালে চড়তে, লাফাতে মন চায়
পাতায় পাতায় বিছানা বানাতে চাই
ডালে পা আটকে উল্টো ঝুলে দোল খাই
তারপর ধপাস। সরাসরি শয্যাশায়ী
হাসপাতালে শুয়ে ভাবি, উঠতে গেলে পড়তে হয়
উত্থানের সাথেই রয়েছে পতন।


প্রথম যখন সাইকেল ধরার অনুমতি পাই
রডের সাথে হাত পেঁচিয়ে, নিচ দিয়ে পেডেল মারি
তারপর একদিন সিটে বসে হাওয়াই বেগে চলি
পিছনে ছোটভাইকে নিয়ে যেদিন চালাতে যাই
তখনই বুঝতে পারি, উঠতে গেলে পড়তে হয়


যেদিন দু'হাত ছেড়ে সাইকেল চালাতে শিখি
নিজেকে মনে হলো রাস্তার রাজা!
এক সময় রাজত্বে বরগী হানা দিলো
আমি নিজেকে রাস্তার পাশে ডাঙাতে আবিষ্কার করি
গোঙানির শব্দে ভেসে আসে -
উত্থানের সাথেই রয়েছে পতন।


প্রাইমারি থেকে হাইস্কুল, সবখানেই মেধা তালিকায়
যেদিন ভার্সিটিতে ভর্তি হতে আসি
বুঝতে পারি, কুয়ো থেকে সাগরে এসে পড়েছি
নিজের কোনো মেধা আছে বলে মনে হলো না।
চাকরি জীবনে পাদুকা ক্ষয়ে মনে হলো-
দৌড়াতে গেলে হোঁচট খেতে হয়। তারপরও
দৌড়াতে হয়, জীবন যে দৌড়ের ঘোড়া।


জীবন তো ভালোই চলছিলো, সংসার হলো
পরিবার বড় হলো, চাহিদা বাড়লো
সময়ের সাথে জীবনের উত্থান শুরু হলো
কিন্তু যেদিন চাকরিটা চলে গেলো আচমকাই
দুই চোখে নেমে এলো পৃথিবী আঁধার
স্বর্গ শয্যা থেকে নরকের শয্যায় দেহখানি তড়পায়
প্রথমে মনটা পঙ্গু হলো, তারপর দেহ
চোখে ভেসে ওঠে- উত্থান পতন বড্ড পাশাপাশি।
জানি, একদিন সময়ের সাথে
সবকিছু পাল্টে যাবে, এ জীবন এই দুর্বোধ্য সময়
ভাটার পর আবারো জোয়ার
আবারো ভর পূর্ণিমায় নেচে ওঠবে গাঙ।
উত্থান-পতন, জোয়ার-ভাটা, আলো-ছায়া জীবনের অংশ।