আর্তনাদ
                             জয়ন্ত


একরত্তি ছোট্টোমেয়ে ছুটছে ঝড়ের বেগে
ও বাবা...ও বাবা... শুনছো?...
আমি ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছি...ফার্স্ট হয়েছি....
বলতে বলতে দীন মজুরের রাজকন্য়ে জড়িয়ে ধরল এসে বাবার গলায়
দারীদ্রতায় বিপর্যস্ত পিতার চোখের কোনে ..অশ্রু ধারার বন্য়া
তার এক ফোঁটা মুক্তোই হয়তো রাজকন্য়া কে অভাগা পিতার উপহার
হাতের ঊপর পড়ে যাওয়াএকফোঁটা অশ্রু নিয়ে...একটু পরখ করে
বলল..বাবা আমি ফার্স্ট হয়েছি|
সারাদিনের ক্লান্তি আর দারিদ্রতার গ্লানি
তখন নেমে চলেছে অঝোর ধারায়....


দেখতে দেখতে তেরোর গন্ডী পেরিয়ে সে নাকি আজ বিপদের সীমানায়!
কি ?কেনো ?কীসের?
জানে শুধূ সেই বাবার বক্ষস্হলের মাঝে..
ধুকপুক করতে থাকা মেশিনটা|
ভাবতে বসে বেড়ে ওঠে তার বেগ
শরীর হয়ে আসে অবশ...
কেন?
ঐ যে ...ঐ...
নদীর পাড়ে পড়ে থাকা গত লাশটা
জানো না  ?    শোনোনি তোমরা?
ঐ যে ও পাড়ার মেয়েটাকে....আমাদের,
না না তোমাদের
না না ভগবানের ভুল করে তৈরী করা মানুষরূপী পশুরা
ছিড়ে খেয়ে ছুঁড়ে ফেলেছে..
অসহায় ,নিরূপায় আর্তনাদ তার
কেঊ কী শুনেছো তোমরা?
শয়ে শয়ে মানুষের ভিড়ে দাঁড়িয়ে
একপলক নিজের মেয়ের মুখখানা...
হয়তো ঠাহর করেছে সে...ঐ খুবলে খাওয়া মুখে|


হায়রে বিধাতা!
তুমি কি দিয়েছো সে সাহস নির্ভয়াদের বাপের শরীরে?
আকাশে বাতাসে কলরোলে ঊত্সবে
সে শুধু শুনতে পায় সেই
        উন্মাদ পাশবিকতার ক্রূর হাসি...হা হা হা হা...
উন্মত্ত মাতাল অত্য়াচারী পাশবিকতা আজও হাসছে...
হাসছে দারীদ্রতা ও
আর চোখের সামনে বেডে উঠছে......... মেয়ের শরীর,
যাকে ঘিরে কতগুলো লোভী জিভ
যেন অন্ধকারের মত গ্রাস করে নিয়ে যায়
এখনি...সে গহন অন্ধকারে|


হতভাগ্য় পিতা ...ঘরপোডা গরু
সিঁদুরে মেঘে তার ভয় ,আর্তনাদ, শিহরন
সব লুকিয়ে রাখে ঐ টুকু হৃদয়ে|
হঠাত্ একদিন রাতের আঁধারে
আশার আলো জাগিয়ে কেউ বলে,
পাত্র আছে ,দিবি কনে বিদায়?
বাঁচবি কিরে কন্য়াদায় থেকে?
গভীর আঁধারে জোনাকির আলো
এতো ভাবার সময় কোথায়?
রাতারাতি দেখাশোনা....আর  হল অকালবিদায়|
চোখের জলে পথের মাটিও হয়েছে নরম
কারো পাথুরে বুকের পাঁজর ও গুনগুনিয়ে ওঠে.....
গরিব বাপের পরী ছিলি তুই
চলে গেলি হয়ে পর,
যতো কাঁদি আমি তবু তোর কাছে
আমি যে স্বার্থপর
আশায় বাঁচিয়ে রাখে নিরাশায়
-তাঁর নাম ভগবান
সে কঠিন জ্বালায় পুডিয়ে এবুক
রাখলাম তোর মান |
শুনে পিশাচের হাসি পাশবিক ত্রাস,
অনেক করেছি রোদন
আমি অনুপায় ক্ষমা কর মোরে
হল তোর অকাল বোধন|
দুঃখ কি আর দুখী কে ছাড়েগো?
ঝাড়লে কি ঝরে পড়ে?
আগুনের খেলা আগুন জানেগো...জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারে|
যে বয়সে মেয়ে ভাত রাঁধা খেলে পুতুলে পরায় শাড়ী
শোভা পায় বলো ঘরনীর সাজ...ছোটো হাতে বড়ো হাঁড়ী?


কিছুদিন পর ফিরে এল শেষে....কাঁদো কাঁদো মুখে..
জড়িয়ে বাবার গলায়..
আমি কি তোমার সব খেয়ে ফেলি -তাড়িয়ে দিলে সে জ্বালায়?
রাক্ষস ভালো খোক্ষস ভালো একেবারে মেরে খায়,
একোন দানবে দিলে মোরে সঁপে- না মেরেই প্রতিদিন খেতে চায়!
এইটুকু দেহ সহিতে না পারে...বড়ই কঠিন বাঁচা,
খেলার বয়সে ,ফেলে দিলে কেনো হিংস্র বাঘের খাঁচায়?


চোখ ছল ছল বুকে যন্ত্রনা..কিংকর্তব্য়বিমূঢ় পিতা
ভাবে মনে মনে...এর চেয়ে ভালো সইতে পারবো
......নরকের শেষ চিতা


হে পিতাগন !
মোর প্রার্থনা
শোনো মোরে একবার
আমি দুর্বল আমি অপারগ...ক্ষম মোরে বারবার|
কুমারী তোমার গৃহের লক্ষী
                                   যতনে রেখোগো তাকে  |
বাল বিবাহের বাঁধনে বেঁধোনা
                                 যতই পড়ো বিপাকে  |
এ জীবন ত্য়াগী হয়েছি চিতার ছাই
        বালবিবাহের পাপ টুকু মোর
                              আজ ও পিছু ছাড়ে নাই   |
মেয়ের জীবন মেয়ের আশা
                             করিয়াছি আমি খুন
পিতা হতে আমি পারলাম কৈ?
              মোর আছে কি পিতার গুন?