মিষ্টি হাসি থামিয়ে হঠাৎ মুখ কালো করে নীলা আমাকে প্রশ্ন করেছিল, 'তোমার সব থেকে প্রিয় কে?'
আমি বলেছিলাম, 'কবিতা।'
সে শুনতে চেয়েছিলো, 'তুমি।'
অথবা শুনতে চায়নি।
গোমরা মুখি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলো।
আমি মুচকি হেসে বললাম, 'তুমিই তো আমার কবিতা।'
সে অভীমানি উঠে চলে গেল।
তাকে ফেরানোর সকল চেষ্টা সেদিন ব্যর্থ হয়েছিলো।
তারপর সেই নীলা মিষ্টি হাসি খুঁজেছি আমি চাঁদের মুখে;
সারা রাত জেগে-থেকে ভোরে ধ্রুব-তারার চোখে চোখ রেখে__আমি নীলা চোখের সৌন্দর্যের কথা ভেবেছি;
কিন্তু ভালোলাগছিলোনা কোন কিছুই : রাতের কোকিল আমার কানে জ্বালা ধরিয়েছিল;
দখিনা বাতসে বন-ফুলের ঘ্রাণ বিষাক্ত মনে হয়েছিল;
জোনাকির অমন সৌন্দর্য প্রজ্বলনে আমি মশাল জ্বেলে পুড়ে ছারখার করে ছিলাম আমার প্রিয় ফুলের বাগান।
সেদিন আমি মৃত্যুকে সর্গের অমৃত আর জীবনের মানে রাসেল-ভাইপারের থলি হতে নির্গত বিষ জেনে__নিজেরই ধ্বংশ ডেকে এনেছিলাম।
নীলা বোধ হয় এ সবের কোন খবর রাখেনি।
রেখেছিলো হয়তো বা,
লুকিয়ে লুকিয়ে আমি তা টের পাইনি।
তার পর একদিন সন্ধ্যে বেলা : নীলা আচমকা আমার ঘরে ঢুকলো;
আমি শুয়েছিলাম চোখের জলে ভেজা বালিশে। স্যাঁত-স্যাঁতে পঙ্কিল মুখ নিয়ে ক্লান্ত নয়নে ফিরে তাকাতেই পুনরায় জলে ছলছল করে উঠলো চোখ।
কে জানে এ কেমন অসুখ!
নীলা শান্ত স্বরে বলেছিল, 'কেমন আছো অপুর্ব?'
আমি তাকে কোন প্রশ্ন না করে শিথানে রাখা কবিতার পান্ডুলিপিটা হাতে তুলে নিয়েছিলাম;
পাশেই গ্যাসের চুলাটা ক্ষুদার্থ ছিলো।
নীলার চোখের সামনে পুড়ে ছারখার হলো সমস্ত : অপুর্বের স্বপ্ন, আশা।
সে অবশ্য প্রতিবাদ করেছিল,
তার পর আচমকা থেমে গিয়ে কি সব জাত-পাত, উচু-নীচু,স্বপ্ন আর বাস্তবতার নিখুঁত বর্ননা দিল__কিছুই বুঝছিলামনা।
শেষমেশ একটা বর, কনের ছবি আকা লাল রং এর কার্ড ধরিয়ে দিলো আমার হাতে।
কি সুন্দর নামের মিল, 'নীলকন্ঠের নীলা।'
আমি প্রথম অবাক হয়েছিলাম সেই দিন।
এখনো আমার চোখের জলে বালিশ ভেজে, তবে নীলার জন্য নয়__হতোভাগী কবিতার জন্য।


শুনেছি নীলা এখন টাকার বিছানায় ঘুমায় কিন্তু কবিতার বই বুকে নিয়ে।