পুরুলিয়ায় অজগ্রামে আমার জনম
           বাবা মা দিনমজুরীতে করতো দিনযাপন
               শবর সমাজের আমি একজন মেয়ে
            দিনমজুরের ঘরে জন্মেছিলাম দুর্ভাগ্য নিয়ে
            প্রকৃতির ইচ্ছায় কারো নেই কোনো হাত
         কেউ ছেঁড়া কাঁথায় জন্মে, ঘরে থাকে না ভাত
                 কেউবা জন্মায় মুখে নিয়ে চামচ সোনার
              জন্মগ্রহনে কিছু করার থাকে না করোর
                 মেয়ে বেলা থেকে আমার কাজ ছিল
      শুকনো কাঠ কুড়নো, তাই ‘কুড়ুনি’নাম আমার হলো’
      
             সেই কুড়ুনির বিয়ে হলো দশ মাইল দুরে
                  সে এক ছোট্ট গ্রাম জঙ্গলের ধারে
       ঝাড়খন্ডের সীমানায়, সভ্যতার আলো ছিল না গ্রামে
        স্কুলের মুখ দেখেনি কখনো দিন চলে জীবন সংগ্রামে
                   বুড়ি শাশুড়ীটা বেশীদিন বাঁচল না
        বিয়ের অনেক দিন পরও আমার পেটে বাচ্চা এল না
                    বরের মেজাজ দিন দিন বিগড়ে গেল
          ‘তুই ডাইনি, বাচ্চা খেয়ে লিচ্ছিস’ বলতে লাগলো
                           ও কেমন যেন হয়ে গেল
                        আর কিছু দিন পর অক্কা পেল


             আমাদের বসতবাড়ীটা ছিল বিঘাখানেক জমির উপর
            বংশ পরম্পরায় এই জমিতে আমাদের ছিল ছোট ঘর
                  আমার একা একা সময় কাটতে লাগলো
                      বয়স ও বাড়লো চুলে পাক ধরলো
             তেলের অভাবে অযত্নে চুলগুলো উড়তে লাগলো
                      দাঁত কিছু পড়ে মুখটা ভয়ঙ্কর হলো
               জমি নেওয়ার লোভে আমাকে ডাইনি দেগে দিল
                   আমাকে দেখলে লোক পালাতে লাগলো
                            আমি একঘরে হয়ে গেলাম


                  সেই রাতের ভয়াবহ ঘটনা মনে হলে শিহরিত হই
                  গভীর রাতে শুনতে পাই হিংস্র পৈশাচিক উল্লাস
                        রাখে হরি মারে কে. মারে হরি রাখে কে?
                     সামান্য আগে আমি গেছি মলত্যাগে বাইরে
                         ঝোঁপের আড়ালে অর্ধচেতনে যেন স্বপ্ন দেখছি
                      জন পঞ্চা্শ অর্ধউলঙ্গ মানুষ উল্লাসে নৃত্য করছে
                                   হাতে সবার জ্বলন্ত মশাল ধরে
                                     আমার ঘর চারিদিকে ঘিরে
                                       “আগুন লাগাও ঘরে
                                  পালিয়ে যেন না যেতে পারে
                                     ডাইনিটাকে পুড়িয়ে মার”
                                          উন্মত্ত চিৎকার
                        সে কি পৈশাচিক দৃশ্য, দরদর করে ঘামছি
                                 পলকহীন বিস্ফারিত চোখে দেখছি
                                       মুখটা আমার হ্যাঁ করে আছে
                                  দেখলাম তারা ঘরে আগুন দিচ্ছে
                        শুকনো কাঠ খড়ের ঘর নিমেষে পুড়ে ছাই হলো
                           তারা এবার অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেল
                           কতক্ষন পড়ে ছিলাম বলতে পারবো নি
                          আমার জ্ঞান যখন এল তখনো ভোর হয়নি
                                        ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে লাগলাম
                              তিনদিন পর এক ছোট্ট শহরে পৌঁচালাম
                                     এখনোও বেঁচে আছি ভিক্ষা করে
                                           বেশ আছি সভ্যতার দুয়ারে