ভারতের আদর্শ নারীর প্রতিভূ, ওগো সীতা
জন্মের পরক্ষন থেকে মাতৃ স্নেহে হলে বঞ্চিতা
অনুঢ়ার সন্তান হয়ে লোক লজ্জার ভয়ে ভীতা
কিংবা কন্যা সন্তান বলে হলে নির্বাসিতা
যদি না উদ্ধার না হতে রাজা জনক,জনিতা
ভারত হারাত তার আদর্শ রত্ন দুহিতা
সেই ধারা এখনও চলছে সমাজে
কন্যা সন্তান হচ্ছে নির্যাতিতা সহজে
ফাঁকা প্রান্তরে পরিত্যাগ করেছিল তোমার জননী
আর্ত চিৎকার কি শুনেছিল সেই মায়াহীন গর্ভধারিনী?
এখনো প্রান্তরে, জঙ্গলে, জঞ্জালে তোমাকে মেলে
হারিয়ে যায় অমুল্য সম্পদ অবহেলে
কালের কপোলে, যুগে যুগে কালে কালে
যদি তোমার বাঁচার অধিকার নাই দিলে
তবে কেন বিধি তোমায় সৃজিল ধরাতলে?
দয়াময় রাজর্ষি জনক তোমাকে আশ্রয় দিলে
রাজ নন্দনী ‘জানকী’ বলে পরিচিত হলে
গোবরেও পদ্মফুল ফোটে
তুমি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বটে
যদিও তোমার নিজ পিতা মাতা করল বর্জন
তুমি রুপে গুণে অন্যতম খ্যাতি করলে অর্জন
প্রস্ফুটিত সুগন্ধি পুষ্পের মতো সুবাস ছড়ালে
ভগবান শ্রীরাম হরধনু ভেঙ্গে তোমায় লভিলে
ত্যাগে সমুজ্জ্বল, পতিব্রতা, হয়ে নিরাভরণ
রাজসুখ ছেড়ে স্বামী সঙ্গে বনে করলে অনুগমন
বছর বছর অরণ্য মধ্যে থেকে অবহেলে
অশেষ কষ্ট তুমি নীরবে সহিলে
স্বামীর আর্ত চিৎকার শুনে
তোমার বিপদ মনে না এনে
স্বামীর প্রান রক্ষার্থে সাহসিনী তুমি পাঠালে লক্ষ্মণে
লঙ্ঘিলে “লক্ষ্মণ রেখা” পতির কল্যাণে
নিজেকে সঁপে দিলে বিপদের কোলে
সুযোগে ছদ্মবেসে রাবণ তোমাকে হরিলে
এখনও ছদ্মবেশী দুর্বৃত্তরা সীতাদের হরণ করে
ছলে, বলে, কৌশলে জর্জরিত করে অত্যাচারে
কত সীতা, সতি, সাবিত্রীরা নিত্য দিন পড়ে ছলনার জালে
অত্যাচারিত নির্যাতিত হয় সভ্য সমাজের কোলে
সারা জীবন তারা অন্ধকার নরকেই থাকে
কোনোদিন বাহির জগতের আলো না দেখে
অশোক বনে তুমি কত কষ্টে ছিলে
শত প্রলোভনে তোমার সতীত্ব না হারালে
উদ্ধারের পরে কলঙ্কিত হলে সমাজের করাল কবলে
অগ্নি পরীক্ষায় যদিও উত্তীর্ণ হলে
সতীত্ব নিয়েই তুমি বনে নির্বাসিত হলে
ঋষির আশ্রয়ে থেকেও কলঙ্ক না ঘুচিল
তোমাকে হতাশায় আত্মাহূতি দিতে হল
এখনো কত নারী দৈনন্দিন হারিয়ে যায় সমাজের গোলে
প্রশাসন থাকে ঠুঁটো জগন্নাথ, কি যাদু আছে তার অন্তরালে?