এই আসরে একদিন আমি এসেছিনু খেলাছলে
সবার সাথে খেলিয়া দু'দিন ভেবেছিনু যাবো চলে।
দিনে দিনে দিন গিয়েছে কেটে, আছি যাই যাই করে
কত গুণীজন মায়ার ছোঁয়ায় হৃদয় দিয়েছে ভরে।
কতজন তবু এরই মাঝে কভু হানিয়াছে ভ্রূকুটি
জাতীয়তা আর বিশ্বাসে যেন দেখিয়াছে কিছু ত্রুটি।
নামে মুসলিম, তবু কি করি মুসলমানেরে ঘৃণা  
শিয়া হত্যার প্রতিবাদ করি - আমি নিজে শিয়া কি না?
মুসলিম যদি, কেন মুসলিমের কঠোর সমালোচনা
কেন শুধু নয় ইসলামী গাঁথা, আল্লাহর প্রার্থনা?

আমি শুধু জানি, অন্তর্যামী এই অন্তরে আছে
যাহা হই আর যাহা নই, তার সবই জানা তাঁর কাছে।
কোনোদিন যদি তাঁর সৃষ্টিকে করে থাকি কিছু ঘৃণা
যাই করি আমি সবই অধর্ম, তাহাদের ক্ষমা বিনা।
নিজের বুকে লুকাইয়া রাখি' গন্ধ, পঁচা ও ক্লেদ
অন্যের থেকে নাসিকা ঘুরিয়ে কেমনে মিটাই খেদ?
যার যে ধর্মে কুর্নিশ দিয়ে, নিজেরই গন্ধ নাড়ি
ক্ষার ও আতরে করি ধোয়াধুয়ি, তবু যায় যদি ছাড়ি'।

ভাবিয়াছে কেহ, বিদেশে বসিয়া ভারত সাগর-তীরে
ভাব ও রঙ্গে শখের কবিতা, লিখি বসে সুখ-নীড়ে।
আমি তো জানি, সাগরের ঢেউ কত নাড়ীছেঁড়া টানে
সুদূর হইতে গভীর বেদনা কূলে তার বয়ে আনে।
আমি তো জানি, পশু ও মানুষ কত কাছাকাছি থাকে
অভাব-ক্ষুধা-লোভ ও স্বার্থে জীবনের বাঁকে বাঁকে।
আমি তো জানি, ক্ষুধার জ্বালা মায়ের ক্ষুধিত বুকে
সন্তানে দু'টি দানা তুলে দিতে হাসি ম্লান হয় মুখে।
আমি তো জানি, কত না মায়ের কত আদরের খোকা
কুকুরের সাথে কেড়ে কেড়ে খায় নর্দমাতেও পোকা -
সত্যবাদী কত না কণ্ঠ অকালে গিয়েছে থেমে
ধনী-রাক্ষস সূর্য খেয়েছে, আঁধার এসেছে নেমে।
আমি তো দেখেছি, করুণ চাহনী চারিদিকে ক্ষুধা মুখে
দু'মুঠি অন্নে দেশমাতা তবু নেয়নিকো তুলে বুকে।

তাই বলিয়াছি, অসহায় মাগো! আমি বুঝি তোর ব্যথা
আমি বুঝি তোর চোখের চাহনী, আর বুঝি নীরবতা।
বুকেতে জড়ায়ে অক্ষম করে রাখিবি কি সন্তানে?
তুমি বলেছিলে, ছেড়ে যারে খোকা জীবনের সন্ধানে।
যেখানেই যা'বি দেখিবি আমার এই বুক বিস্তৃত
সবখানেতেই মায়েদের বুকে সন্তান আছে ধৃত।

তোমার মূর্তি হৃদয়ে লইয়া পদে শুয়ে থাকি দূরে
তুমি জানো মাগো, হৃদয় আমার গান গায় কোন সুরে।
দুখিনি মা তোর সন্তান আজ পৃথিবীর নাগরিক
তোর জয়গানে মুখরিত করি পৃথিবীর দশদিক।
কে আর জানে প্রতি মাঝরাতে কতটুকু তেল পোড়ে
কোন্ বেদনায় অভাগা অকবি কথায় ছন্দ জোড়ে।

তোরই তো মাগো সন্তান ওরা, যাহা বলে নাহি দুষি'
গন্ধ বিলিয়ে আমি শুধু চাহি করিতে সবারে খুশী।
জানি মা তোর এ ক্ষুদ্র ছেলে, ক্ষুদ্র ক্ষমতা রাখে
তবু জাগ্রত বুকে আশা, যেন সকলেই ভালো থাকে।

আমি জানি মাগো, কত ব্যথা বুকে কতটুকু সমঝোতা
ক'টি মুখে আনে একটু হাসি, স্বস্তির শুভ্রতা।
হে বিপ্লবী! বিপ্লবী হওয়ার ক্ষমতা আমার কই?
সমঝোতা করি, তবু মা জানে, বিশ্বাসঘাতক নই।
তোমারে স্যালুট, ছিনিয়ে এনেছো স্বাধীন সোনার দেশ
তোমার তরে তাই যে আমার কৃতজ্ঞতাও অশেষ।
তবু জেনে রেখো, বাঁচার যুদ্ধ এখনো যায়নি থেমে
যুদ্ধের মাঝে আজও সেবা দিই দেশ-মানুষের প্রেমে।

কাব্যদেবী! জানি গো নীরবে আজ ভ্রুকুটি হানো
নয়া আগন্তক, অচেনা কণ্ঠ - শরমে ঘোমটা টানো।
কোন্ অভাজন সকাল দুপুরে দেয়নি চরণে ফুল
বেলাশেষে এসে ভক্তিগানে সহসা এতোটা আকুল?
জেনো এই এক বিকেলের পাখি, সকালে ভাঙেনি ঘুম
সব না গাওয়া গান গাহিতে সাঁঝে তাই এতো ধুম।
পেয়েছো জানি নতুন ভক্ত, নতুন পূজার রীতি
যাহারা ভাবে বৃথা এই যুগে রবি-নজরুল-প্রীতি।
আমি শুধু বলি যাহা মনে আসে, যেমন ভাবেই আসে
তোমার চরণে রেখে যাই তা, সহজ কথার প্রকাশে।
কিবা যায় আসে আদৌ আমি কবি কিবা কবি নই
কবিতার প্রেমে এই আসরে কবিদের সাথে রই।