গহীন অন্ধকারের মাঝে যে এসেছে ধরায়
নিত্যদিনের আরব-জীবন সে মন প্রশ্নে ভরায়।
অবক্ষয়ের হাজার প্রশ্নের নিত্য জবাব খোঁজে
শক্তিবিহীন পুতুল প্রভুর অসারতাও বোঝে।


অসহায়ের দুরবস্থা, নিষ্ঠুরতা, খুন
সুখের সজ্জা বুকের মাঝে জ্বালায় যেন আগুন।
হীরার গুহায় মগ্ন থাকে একলা নিরজনে
প্রভুর কাছে আলো যাচে, আর শান্তি মনে।


প্রভুর আলোর ছটা হঠাৎ আসে হীরা-গুহায়
'পড়' - ফেরেস্তা জিবরাইল দৃপ্ত কণ্ঠে শুনায়।
মুহাম্মদের ভীত-কণ্ঠ করে উচ্চারণ
আমি তো নই অক্ষর-জ্ঞানে আদৌ পাঠক-জন।


বুকের মাঝে জড়িয়ে তখন ধরে জিব্রাইল
চাপে যেন ভেঙে যাবে দুই পাঁজরের খিল।
ঠিক তখনই ছেড়ে আবার 'পড়' মুখে বলে -
পড়তে আমি জান নাকো - তিনবার এই চলে।


জিব্রাইলের কণ্ঠে শেষে স্পষ্ট উচ্চারণ -
"পড় তোমার প্রভুর নামে, সবের স্রষ্টা যেজন;
মানুষ সৃষ্টি করেন যেজন জমাট রক্ত হতে,
পড়! তোমার প্রভু সর্বোচ্চ দয়াবান জগতে,
যেজন দয়ায় শিখিয়েছেন লিখতে কলম দিয়ে,
আর মানুষকে শিখিয়েছেন, অজানা জানিয়ে।"


ছাড়া পেয়ে মুহাম্মদ যায় দৌড়ে নিজের ঘরে
বুকটা যে তাঁর ভয়ে কেঁপে ওঠানামা করে।
খাদিজাকে বলতে থাকে, আমায় ঢেকে দাও
ভয়ে মরি, একি হলো আমাকে তা বুঝাও।


খাদিজা কয়, আল্লা্হর নামে হও গো তুমি শান্ত
ভয় পেয়ো না, আর হয়োনা এতটাই বিভ্রান্ত।
কখনই সে করবে নাগো তোমায় অপমান
তুমি সদাই সত্যবাদী, দুস্থে করো দান।


সবার সাথে সুসম্পর্কে দাও তুমি সম্মান।
সেবা করো ভক্তি-দয়ায় আসলে মেহমান।
দানের ওহাত বাড়িয়ে তুমি আনো সবার সুযোগ,
যখন যারা বিপন্ন হয়, ভাগ্যে নামে দুর্ভোগ।


খাদিজা নেয় শেষে তাঁরে চাচার ছেলের কাছে
খ্রীষ্টান-ধর্ম-বাইবেলে যার গভীর শিক্ষা আছে।
খ্রীষ্টান হয়ে বাইবেল লেখায় হাত ছিল যার সিদ্ধ
বয়সভারে অন্ধ তখন, আর হয়েছে বৃদ্ধ।


সবটা শুনে ওয়ারাকা কয়, সে ছিল জিব্রাইল
মূসার কাছেও করেছিল আল্লার বাণী নাজিল।
বৃদ্ধ আমি বাঁচব নাকো দেখতে নিজের চোখে
যেদিন তোমায় তাড়িয়ে দেবে তোমার নিজের লোকে।


ভয়ে শুধায় মুহাম্মদ তাই, সত্যি করেই তারা
তাড়িয়ে আমায় করবে শেষে নিজেরই ঘর ছাড়া?
ওয়ারাকা কয়, তোমার আগে পায়নি কেউই রেহাই
আল্লাহ হতে যে যখনই এমন বাণী পায়।


বাঁচলে সেদিন, থাকলে সেদিন আমি যুবক-শক্ত
তোমার সাথে যুদ্ধে যেতাম হয়ে তোমার ভক্ত।
চাচাতো ভাই ওয়ারাকা তার অল্প কদিন পরে
এই দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিলও চিরতরে।


মুহাম্মদের দিন কেটে যায় বিষণ্ণ এক মনে;
হাঁটতে পথে আকাশ হতে হঠাত কারে শোনে?
ঊর্ধ্বে চেয়ে দেখে যে সেই হীরার ফেরেস্তাই
ঘরে ফিরে নিজকে আবার ঢাকলো সে শেষটায়।


বাণী এলো,
হে মুহাম্মদ! উত্থিত হও, আর হও সাবধান
তোমার প্রভু আল্লা্হর নামে করো গুণগান।
বিশুদ্ধ-পাক পোষাক তুমি করো পরিধান
থাকো আর-রুজ মুর্তি হতে দূরেতে সাবধান।


এমনিভাবে চলতে থাকে আল্লা্হর বাণী আসা
তেইশ বছর আল্লা্হর কথা, যা কোরাণের ভাষা।
হীরার গুহায় প্রথম আসা ঐশী আলোর ছটা
সত্য ধর্মের আলোয় ভরে এই পৃথিবী গোটা।