আরব দেশের প্রথা তখন, শিশু জন্মের পরে
জন্ম-মাতা ছেড়ে যাবে দুগ্ধ-মাতার ঘরে।
দুগ্ধ-মাতা হবে মরুর মুক্ত-বেদুইন -
নির্ভীক মন, শুদ্ধ জীবন, জটিলতাবিহীন।


বিনিময়ে বেদুইন মা যা কিছু পায় দান
তাই নিয়ে নিজ সংসারে দেয় সেই শিশুর স্থান।
যত্নে তারে লালন করে নিজের বুকের সুধায় -
মরুর কঠোর জীবন-শিক্ষা, খাদ্য শিশুর ক্ষুধায়।


জন্ম নেওয়ার আগেই যে জন পিতৃহারা বালক
সেই মোহাম্মদ কার ঘরে আর আনবে ধনের আলোক?
দুধ-মাতারা যত্নে নিল, যাদের পিতা ধনী
অবহেলায় রইল পড়ে মা আমিনার মণি।


বছরটাও যে রুক্ষ ছিল, শস্যবিহীন খরা
মা হালিমার গাধাও ছিল রুগ্ন-অর্ধ-মরা।
দুধ দেওয়া তার উটগুলিও ছিল দুগ্ধবিহীন
নিজের শিশুও কাঁদে ক্ষুধায়, দুর্বল আর ক্ষীণ।


মক্কায় এসে পৌঁছে যখন, ধনীর শিশু বেছে
আগে আসা দুধ-মাতারা আগেই নিয়ে গেছে।
মা হালিমা হতাশ হয়ে তখন মনে ভাবে
একটা শিশু না নিয়ে সে কোন লজ্জায় যাবে।


পিতৃহারা মোহাম্মদকে তাই নিল সে তুলে
কী পাবে আর কী পাবে না সে হিসাবটা ভুলে।
হায় রে একী মা হালিমার শুকনো দুটো স্তনে
এতো দুগ্ধ পূর্ণ করে দিল রে কোনজনে?


মা হালিমার স্বামী গেল দুধের উটের কাছে
দেখে তারও স্তন দুটিতে দুগ্ধ ভর্তি আছে।
বোঝে তারা তাদের ঘরে আশীর্বাদের আলো
যার কারণে নিঃস্ব শিশুও আনছে এতো ভালো।


মা হালিমার দুই ছেলে ও একটি ছিল মেয়ে
মোহাম্মদের দিন কেটে যায় আদর-যত্ন পেয়ে।
দুইটি বছর বয়স হলে দুধ-শিশুরা ফেরে
জন্মদাতা মায়ের কোলে, দুগ্ধ-মাতা ছেড়ে।


কেঁদে ওঠে মা হালিমার ব্যাকুল মাতৃ-মন
কেমন করে ফিরিয়ে দেবে এমন মহাধন!
তাই রাখে সে মা আমিনার কাছে আবেদন
পাওনা ছাড়াই মোহাম্মদ থাক তাদেরই একজন।


নিজের ছেলের যত্ন দেখে মা আমিনাও খুশি
মোহাম্মদকে ফিরিয়ে দিল মা হালিমায় তুষি।
মা হালিমার ঘরে আরও দুইটি বছর কাটে
দুগ্ধ-ভাই ও বোনের সাথে যায় প্রতিদিন মাঠে।


তেমনি সেদিন সবাই মাঠে দিনের কর্ম করে
হঠাৎ দেখে দুজন এলো সাদা পোশাক পরে।
মোহাম্মদকে একলা ধরে নিল দূরে টেনে
মাটিই শুইয়ে বুকটি কাটে ছুরির আঘাত হেনে।


দুগ্ধ-ভাই ও সাথী যারা মোহাম্মদকে ছেড়ে
অতি ভয়ে কাতর হয়ে দৌড়ে বাড়ি ফেরে।
ভয়ে তাদের মুখগুলি সব দেখায় সাদা চুন
বলে, মাঠে মোহাম্মদ আজ হয়ে গেল খুন।


সবাই এসে দেখে মাঠে মোহাম্মদই একা
তারও সাদা মুখে দেখে সবাই ভয়ের রেখা।
সেও জানে না কী ঘটেছে কেমন ঘোরের মাঝে
স্রষ্টা যে তার সেই-ই জানে কী ছিল সেই কাজে।


দুগ্ধ-মাতার পরিবারে নামলো তাতে ভয়
এমন শিশুর কোন ঘটনায় কী জানি কী হয়!
তাই মোহাম্মদ দুগ্ধ-মাতার স্নেহের সে ঘর ছেড়ে
আদর পেতে জন্মদাতা মায়ের কোলে ফেরে।


নবী হওয়ার পরের জ্ঞানে গিয়েছিল জানা
কী ছিল সেই মাঠে সেদিন আজব ব্যাপারখানা।
জিব্রাইল ও মিকাইল ফেরেস্তা দুইজন
আল্লা্হর নির্দেশে ধরায় করে অবতরণ।


বুকটা কেটে মোহাম্মদের হৃদয়খানা খুলে
শুদ্ধ জলে ধুয়ে নিল সব কালিমা তুলে।
ঘাড়ের উপর মেরেছিল নবুয়তের মোহর
মানবতার তরে যে তাই শুদ্ধ সে অন্তর।