চৈত্র-দগ্ধ জমিনের বুক চষে কৃষকের লাঙল
জ্বলন্ত হাপরে নেমে আসে বৈশাখী ঢল।
কঠিন জমিন হয় বিগলিত, যেন নারী-দেহ
বীজের সুপ্ত প্রাণ জেগে পায় মাতৃত্বের স্নেহ।


বিরাণ মাটির বুক ঢাকে সবুজের সমারোহে
কৃষকের নিড়ানি চলে জ্যৈষ্ঠ-রোদে দহে।  
সোনালী ফসলের স্বপ্ন বুকে আনে শীতলতা
ভীরুমন দুঃস্বপ্নে দেখে প্রকৃতির ভয়াবহতা।


পরিমিত বৃষ্টি চায় সময়ে, চায় না প্লাবন
চায় তাই বিধাতার করুণার আষাঢ়-শ্রাবণ।
ফসলের মায়ামাখা মন তাই ডাকে বিধাতাকে
গাছে গাছে আম, কাঁঠাল আরও জাম পাঁকে।


শারদ-মেঘের ভেলায় আকাশের বুকে ভেসে
মা-দুর্গা ও স্বরসতী আশিস দেয় হেসে।
খাল-নদী-বিল হয় পূর্ণযৌবন-উন্মত্তা-দেহ
কাশফুলে মাঠ ভরে, শাক আর মাছে ভরে গেহ।


সোনালী ধানে উঠোন ভরে হেমন্তে কৃষাণ
কৃষাণির চোখ হাসে, বুক হাসে কণ্ঠ গায় গান।
উন্মত্ত বাতাস নাচে উঠোনে নবান্নের সৌরভে
কৃষাণির হৃদয় নাচে নবান্ন বণ্ঠনের গৌরবে।


গুড়, পিঠা, পাটালির সৌরভে ভরা মিষ্টতায়
জীবন হয় স্বপ্নময় নরম রোদের শিষ্টতায়।
রুপসী বাংলার গ্রামে গ্রামে নবান্নের উত্সব
ঘরে ঘরে দিয়ে যায় নতুন জীবনের অনুভব।


নগরের ইট কাঠে আজ নবান্নের উত্সব বিলুপ্ত
দেশ ও বিদেশে বাঙালীর মনে তবু যে তা সুপ্ত।
বাঙালীর ঘরে ঘরে আবার সেই উত্সব আসুক
বাংলাকে হাসানো কৃষকেরা ঘরে ঘরে হাসুক।