এক গাঁয়ে ছিল এক ধার্মিক লোক
দেখা হলেই বলতো সে - মঙ্গল হোক।
করতোও সাধ্যমতো অপরের ভালো
কর্ম-কথায় ছড়াতো সে ধর্মীয় আলো।

নিজ ঘরে ভরা ছিল দুঃখ ও অভাব,
নিত্যকার অভিযোগ, স্ত্রীর স্বভাব –
লাভ কী সে স্রষ্টার প্রার্থনা করে
দেয় না যে সুখ আর সম্পদ এ ঘর ভরে?

বীজ বোনো স্রষ্টা-নামে করে গুনগান
সকলি পোকায় খায়, হয় না তো ধান।
নদী জলে জাল ফেলো তাঁরই নাম নিয়ে
ওঠে না একটাও মাছ, যায় সব পালিয়ে।

তোমারই আর এক ভাই মানে নাকো ধর্ম
সারাদিন করে সে তো কতো অপকর্ম।
স্রষ্টা ফেলে পাপিষ্ঠ রাজার করে গুনগান
সুখ ও আনন্দে ভেসে হয় আরও ধনবান!

কাল থেকে না গেলে তুমি রাজার কাছে
তোমার ভাগ্যে জেনো অনেক দুঃখ আছে।
আমি চাই সম্পদ, চাই ভালো বাড়ি,
সোনার গহনা, সুগন্ধী আর দামী শাড়ি।

সকালে বেচারা স্বামী স্ত্রীকে বলে - যাই
রাজদরবারে যদি উচ্চ বেতনে কাজ পাই
হয়তো পূরণ হবে তোমার কিছু আশা
ভাগ্যে যদি মেলে তাতে তোমার ভালোবাসা।

পায়ে পায়ে চলে যায় নির্জন সাগর তীরে
পাথরের উপর বসে ভাবে, দিন যায় ধীরে -
হে স্রষ্টা, আমি তো জানি না মিথ্যা-চাতুরী
যার গুনে রাজা দেবে এই অযোগ্যে চাকুরী।

জেনেছি তোমাকেই আমার একমাত্র রাজা
আমার বিশ্বাস ও কর্মের একি দাও সাজা?
সন্ধ্যায় ফিরে খায়, থাকে খুব নিশ্চুপ-শান্ত  
স্ত্রী ভাবে, কঠিন রাজকাজে স্বামী বড় ক্লান্ত।

এমনিভাবে কেটে যায় মাসের উনত্রিশ দিন
সকালে আসে স্ত্রীর চোখে এক স্বপ্ন রঙিন।
স্বামী তার পেয়েছে সেদিন বেতনের টাকা
তাতে কেনা শাড়ি আর গহনায় দেহ তার ঢাকা।

স্ত্রীর অলক্ষ্যে স্বামী সেদিন করে প্রস্থান
বড়ই চিন্তিত, কেমনে আজ বাঁচায় সে প্রাণ?
যায় না সাগর তীরে সেদিন, হাঁটে পথে পথে
আর ভাবে কেমনে রেহাই পাবে স্ত্রীর হাত হতে?

সন্ধ্যায় নিরুপায় বেচারা স্বামী ফেরে ঘরে
দেখে তার স্ত্রী যেন খুশীতে ঝলমল করে।
বলে তারে, আজ কেন যাওনি রাজার কাজে
বেতন পাওয়ার দিনে কি এমন হেলা সাজে?


হতভম্ব বেচারা স্বামী স্ত্রীর মুখপানে চায়
স্ত্রী তার খুশী মনে দ্রুতপায়ে ঘরমাঝে যায়।
ফেরে তার হাতে নিয়ে সুন্দর এক থলি
তারপর বলে, আনন্দে-আহলাদে গলি -


ঘরে আজ এসেছিল একজন রাজার চাকর
দিয়ে গেছে উনত্রিশ খানা সোনার মোহর
তোমার উনত্রিশ দিন কাজের বেতন
তোমার অনুপস্থিতিতে হত আজ রাজার চেতন।


সে কোন রাজার এ কাজ, স্বামী তার বোঝে
দ্রুত যায় ঘর ছেড়ে সে রাজার খোঁজে।
তারপরে কেটে গেছে বহুদিন, স্ত্রী আছে সুখে
স্বামী আজও খোঁজে সেই রাজা - শোনা লোকমুখে।