কাক ডাকা ভোরে উঠেছিনু ট্রেনে
বসেছিনু জানালার পাশে এই সিটটিতে।
দ্রুত বেগে চলন্ত ট্রেন,
জানালায় চোখ রেখে দেখি গেছি বাইরের জগৎ।


কত দ্রুত ছুটে গেল পিছে
শত গ্রাম, শহর আর বনান্তের ওপারের দিগন্ত।
জীবনের কিছু হাসি, কান্না দেখিনি এমন তো নয়
কিছু তার নিতান্তই আটপৌরে।
কিছুই তার হৃদয়ের জমিতে মাটি চিরে
বোনেনি স্মৃতির বীজ এমন কী বলা যায়?


অনেক স্টেশনে থেমেছে যখন এ ট্রেন
সময়ের পরিচিত কিছু মুখ নেমে গেছে নীচে
নতুন কত মুখ এসেছে আবার।
সময়ান্তে শব্দের পরিবর্তন,
তবে কোলাহল ছিল সর্বক্ষণ।
সময়ে যে শব্দ ছিল শ্রুতিকটু
বিদায়ের আগে নিস্তব্ধতার আশঙ্কায় কেঁদে ওঠে মন
নতুন শব্দ ক্ষণিকে ভরেছে সে শূন্য নিস্তব্ধতা।


শুরুতেই বসেছিনু এই সিটটিতে
নাকটা সিটকিয়ে, রুমালটা দিয়ে একটু ছেড়ে মুছে
তবু ছিল কার যেন স্পর্শের উষ্ণতা, শরীরের গন্ধ,
ক্রমশঃ ভরেছে তা আমার গন্ধ ও উষ্ণতায়।
জানালাটা খুলে দিয়ে নিয়েছি বন্য ফুলের সুবাস
মৃদুমন্দ সমীরণে ঢেউ তুলে চুলে
মধুর পরশ রেখে গেছে কপালে।
তীব্র রোদ শুধু করেছে বিদগ্ধ আমায়
এমনকি বলা যায়?
বৃষ্টির কণাগুলো যত দিক আদরের চুম্বন মুখে
জানালার শার্ষীটা করেছি যে বন্ধ
সে কি শুধু নিজেকেই বাঁচাতে
সিটটাকে বাঁচানোর ছিল না কি কোন আয়োজন?


আমার শেষ গন্তব্য অদূরেই -
আয়োজন হয়েছে শুরু
সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে নেমে যাবো অচিরেই।
ক্ষণিক এ যাত্রা ছিল,
তবু কিছু স্মৃতি পিছে টানে।
চারিদিকে ক্ষণিকের সাথীগুলো চেয়ে আছে নীরবে,
নিমেষে চোখ বুলিয়ে নামার আগে
থমকে গেল চোখ দুটি সিটটির উপর
কেন জানি এই বুকে অব্যক্ত মায়া।
মুছে দেওয়ার অজুহাতে শেষবার স্পর্শ রাখলাম -
কে জানে, হয়তো রেখে গেলাম কিছুটা উষ্ণতা
নিজ শরীরের কিছুটা স্পর্শ, কিছুটা গন্ধ।
একটু পরেই যে যাত্রী বসবে সেটাই
আমার স্পর্শটা তার পছন্দ হোক বা না হোক
অন্ততঃ শীতের এই সন্ধ্যায় পায় যেন কিছুটা উষ্ণতা।