এইখানে, যদিও
শহরে শহরে চাঁদ ওঠে,জোছনা মূল্যহীন- নিয়ন বাতির আলোয়!
মনুষ্যত্বহীন মানুষ, ইট-সিমেন্ট-বালির মাঝে 'মানব মুখোশ' পড়ে থাকে।
চাঁদ কখনো আক্ষেপ করে না; আবর্তনে সূর্যের কোন ক্লান্তি নেই;
মানুষ অকৃতজ্ঞ প্রকৃতির প্রতি-, তবুও ধরনী ডানা রাখে মেলে।


এইখানে, মুমূর্ষ
শ্রান্ত, ক্লান্ত হাওয়ায়, জীবন-জীবিকা অবসাদে অবসন্ন;
ধর্ম পুত্রের মত সৌম্য-মঙ্গল পুরুষেরা দূ্‌্তসভায় বিপর্যস্ত,
গাছের বাকল- হরিণের ছাল- বনে অজ্ঞাত বাস;
প্রত্যাশায়-কুরুক্ষেত্রে হবে ঘাসের চাষ,রক্ত শুকাবে দাবদাহে।


এইখানে, সমস্ত
রাত মেনকা,রম্ভা,উর্বশীদের ঘিরে দেবতাদের প্রমদ জলসা!
যতই সুন্দরী হোক রাত,তবুও কালো, দৃশ্যহীন আধাঁরে ঢাকা।
বোধি বৃক্ষ-অমিতাভ; হেরা পর্বত-মুহম্মদ; বোধে নেই!
এখন রাত- সবাই দেখে- জেগে ঘুমায়- স্তব্ধ- ব্যভিচারে।


এইখানে, তবুও
অমর প্রকৃতি, সেই সূর্য স্বাক্ষী- কারবালা ও কুরুক্ষেত্রের।
রক্তে সন্ধ্যার আকাশ রাঙ্গায় গোধূলীর আগে,অক্ষয় স্মৃতিচারণ।
বৈষয়িক মানুষ মদের পাত্রে ঠোঁট রেখে স্মৃতি হাতরায়, বিকৃত;
হযতো বা ব্রক্ষা-ঈশ্বর-আল্লাহ সাপ ছেড়ে খেলা দেখে!


এইখানে, এখনো
মাঝরাতে চাঁদের প্রতিবিম্ব বুকে করে নদী কোথায় বয়ে যায়!
যমুনা পাড়- রাধা-কৃষ্ণ অথবা নীলনদ- ইউসুফ-জুলেখা;
যমুনা-নীল এখনো বহমান,কালের স্বাক্ষী শুধু নির্বাক,
কালের মতই; তবুও রাধা-জুলেখা-ক্লিওপেট্রা-মমতাজ তার মাঝে!


এইখানে, ক্লান্ত
মেঘ মন্থন করে,ঝরে, প্রদীপ্ত করে মলিন পত্র। শিক্ষক-
মহীরূহ- ত্যাগ ও ধৈর্যের;মানুষ একান্তই বৈষয়িক ও আমার!
মানুষ মনুষ্যত্ব হারায়, কুটিল পাঁক, দেবতা চিতায় পোড়ে;
টাকার তোড়ায় কলির পীরেরা পীরত্ব জাহির করে জৌলুসে।


এইখানে, স্তব্ধ
রাতে হীম বাতাসে গুমরে বেড়ায় অসংখ্য প্রানের বিলাপ- কান্না!
দ্রৌপদীদের বস্ত্র হরণ যুগে যুগে, পান্ডবেরা চিরকাল মূক-বধির-অথর্ব।
মরিয়ম পুত্র- ক্রশবিদ্ধ; কর্ণ- কুন্তির পুত্র তবুও কৌন্তেয় নয়;
ধর্ম-সত্য নির্বাসিত বনে- পর্ণ কুটিরে, দূর্যোধনেরা ইন্দ্রপ্রস্থে!


এইখানে, আকাক্ষা
বোধ-বিবেক-চেতনার ঝড়;গুড়িয়ে যাক মিথ্যা মোহের ঘর,ভাঙ্গুক!
পৃথিবীর সৃষ্টি থেকেই আকাশে কালপুরুষ, এখনো চিরন্তন উপমা।
তামাদি কালের শিশু আমার পূর্বপুরুষ, আমার শিশু উত্তরপুরুষ;
উত্তরপুরুষেরা অমর হবে খাঁচা ভেঙ্গে আসতে যদি পারে বেরিয়ে!


এইখানে, অজস্র
বৃত্তের শুরু, শেষ নেই কোনো; বৃত্তের শেষ থাকে না পথ চলায়।
জন্ম-শৈশব-তারুণ্য-যৌবন-রমন-বার্ধক্য-মৃতু্‌্; মাঝে নতুন মুখ--
আমার সন্তান; একই সূর্য- সেই বৃত্ত- গন্তব্য পূর্ব-পশ্চিম ক্লান্তিহীন!
পিতা- ভেতরের বৃত্ত;সন্তান- বাইরের বৃত্ত;পৃথিবী বৃদ্ধ হয় বৃত্ত থেকে বৃত্তে!


১৩/০৩/২০০২


আনন্দ থাকুক ছড়িয়ে