।ভূতুড়ে লেখা।


একজনের লেখা কবিতা আর একজনের নামে চালানোর ধারাবাহিকতা বন্ধ হওয়ার নয়। অপেক্ষাকৃত অপরিচিত একজন কবির লেখা বিখ্যাত কোনো কবির নামে কীভাবে চালানো হয়, কেনই বা চালানো হয়, তা নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণা হবে নিশ্চয়ই। এই ধরনের ভূতুড়ে লেখা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, কোনো একটা কবিতাকে একজনের লেখা জেনে কবির নাম হিসেবে অন্যদের কাছে কবি হিসেবে যাঁর নাম জেনেছি তাঁর নাম বলার পরে যদি জানা যায় ওটা অন্য কারো লেখা, তখন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।  অন্যদের কাছে নিজের বিশ্বস্ততাও এতে নিম্নমুখী হয়। তাই ব্যাপারটা বড়োই অস্বস্তিকর!


বিখ্যাত লেখকের লেখা নিজের নামে চালাতে চান অনামী লেখক স্বয়ং। উদ্দেশ্য: নিজেকে মহিমান্বিত করা। গবেষণাপত্রে অন্যের লেখা টুকে চালানোর দৃষ্টান্ত প্রচুর। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য: কাঙ্ক্ষিত ডিগ্রি অর্জন করে নিজের বৈষয়িক উন্নতিসাধন। ইদানিং গবেষণাপত্রে টুকলি বা কুম্ভীলকবৃত্তি আটকানোর জন্য নিয়ামক সংস্থা কম্পিউটার সফটওয়্যারের সাহায্য নিয়ে থাকেন। অনামী লেখকের লেখা বিখ্যাত লেখকের নামে চালানোর ক্ষেত্রে অনামী লেখক নিজে জড়িত থাকেন কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। অনুমান করা যায়, জড়িত থাকতেও পারেন। উদ্দেশ্য: বিখ্যাত লেখকের নামে চালিয়ে নিজের লেখার বহুল প্রচার ও তার মাধ্যমে নিজের নাম ছড়িয়ে দেওয়া। পরে কোনও এক সময়, লেখাটিকে নিজের লেখা বলে দাবি করলেই হল।  অবশ্য, এটা আমার অনুমান মাত্র। এমন অনুমানের কারণ, কার আর খেয়ে কাজ নেই, অচেনা একজন অনামী  লেখকের লেখাকে বিখ্যাত কারো নামে চালাবেন! অনামী লেখক নিজে জড়িত না থাকলেও, তাঁর কোনও শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁর জ্ঞাতসারে এরকম দুষ্কর্মটি করতে পারেন। ভবিষ্যতে ভূতুড়ে লেখা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামাতেই হবে। কেননা, ভূতুড়ে লেখার সংখ্যা বেড়েই চলেছে।


কিছুদিন আগে, এই বিষয়ে 'উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে' বলে একটা লেখা লিখেছিলাম। এবারের আলোচ্য কবিতাটি, অনেকদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে, বিখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার নামে ইংরেজিতে চলছে। কবিতাটি অনেকের মতো আমারও ভালো লেগেছে। কবিতাটি নীচে তুলে দিলাম।


You Start Dying Slowly


‏You start dying slowly ;
‏If you do not travel,
‏If you do not read,
‏If you do not listen to the sounds of life,
‏If you do not appreciate yourself.


‏You start dying slowly.
‏When you kill your self-esteem,
‏When you do not let others help you.


‏You start dying slowly ;
‏If you become a slave of your habits,
‏Walking everyday on the same paths…
‏If you do not change your routine,
‏If you do not wear different colours
‏Or you do not speak to those you don’t know.


‏You start dying slowly.
‏If you avoid to feel passion
‏And their turbulent emotions;
‏Those which make your eyes glisten
‏And your heart beat fast.


‏You start dying slowly.
‏If you do not risk what is safe for the uncertain,
‏If you do not go after a dream,
‏If you do not allow yourself,
‏At least once in your lifetime,
‏To run away from sensible advice...


Love yourself, Love your life.


বন্ধুদের ইচ্ছায়, কবিতাটি আমি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করি। আমার করা বাংলা অনুবাদটি এই রকম।


তোমার মৃত্যুর আর দেরি নেই


যদি তুমি বাইরে বেরিয়ে না পড়ো
যদি তুমি না পড়ো কোনো বই
যদি তুমি জীবনের শব্দ না শোনো
যদি তুমি নিজের কাজের মূল্যই না দাও
তবে তোমার মৃত্যুর আর দেরি নেই।


যদি তুমি নিজের আত্মসম্মান খুইয়ে ফ্যালো
যদি অন্যদের তোমার সাহায্যে লাগতে না দাও
তবে তোমার মৃত্যুর আর দেরি নেই।


যদি তুমি অভ্যাসের দাস হয়ে যাও
যদি সারা জীবন একই পথে চলতে থাকো
যদি তোমার রুটিন না পাল্টাও
যদি তোমার পোশাকে না রাখো বহু বিচিত্র রঙ
যদি তুমি অপরিচিতদের সঙ্গে কথাই না বলো
তবে তোমার মৃত্যুর আর দেরি নেই।


যদি তুমি কামনার অনুভব এবং  
তার উথালপাথাল আবেগকে এড়িয়ে চলো--
যে আবেগ তোমার চোখকে উজ্জ্বল করে তোলে
দ্রুত করে দেয় তোমার হৃদয়স্পন্দন --
তবে তোমার মৃত্যুর আর দেরি নেই।


যদি তুমি অনিশ্চয়তার ঝুঁকি না নাও
যদি তুমি স্বপ্নই না দ্যাখো
যদি জীবনে অন্তত একবার বাঁধন না ছেঁড়ো
তবে তোমার মৃত্যুর আর দেরি নেই।


নিজেকে ভালোবাসো.... জীবনকে ভালোবাসো।


কবিতাটি বাংলায় অনুবাদ করলেও, ওটি পাবলো নেরুদার কবিতা কিনা তা নিঃসন্দেহ হওয়ার জন্য আমি খোঁজ করতে থাকি। গুগলে সার্চ করে জানতে পারি, কবিতাটি পাবলো নেরুদার নয়। কবিতাটি ব্রাজিলের মার্থা মেদেইরোস (Martha Medeiros) নামক জনৈকা কবির লেখা। ল্যাটিন অ্যামেরিকান হেরাল্ড ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, নেরুদা ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আলোচ্য কবিতাটি পাবলো নেরুদার লেখা নয়, কবিতাটি Martha Medeiros-এর লেখা।


ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যম যেমন অনেক দূরের জিনিসকে আমাদের কাছে নিয়ে আসে, তেমনই ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যম অনেক ভুলভ্রান্তিরও বাহন হয়ে উঠেছে। ফলে, এইসব মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে একটু বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখা দরকার, ভূতুড়ে লেখা ছড়িয়ে দিতে ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমের জুড়ি নেই।


অরি মিত্র