একদিন যে নদীর কাছে আমি পৌঁছাতে পারিনি,
সেই নদী এখন বয়ে চলেছে
আমাদের বসতবাটীর সামান্য দূরে;
প্রতিবেশি-প্রায় চাষিদের ক্ষেতের শস্য
সেই নদীর জলে পুষ্ট হয়ে হাত-ঘুরে
আমাদের ঘরে প্রসাদ হয়ে পৌঁছে যায়।


সকালে সেই নদীর জল বড়ো বেশি গম্ভীর;
দুপুরে সূর্যের কিরণে ঝিকিমিকি সেই নদী–
                                         ক্লান্তিহীন বয়ে যায়–
প্রাণে ঘোর-লাগা এক দুর্বার গতির টানে
আমি ভাসতে থাকি সেই নদীর পাশাপাশি।
সন্ধ্যায় গোধূলির ম্লান আলোয় সেই নদী–
                                           মায়াময় সেই নদী–
কানে কানে বলে যায় স্বপ্নের ঠিকানা;
রাতের গহীনে আকাশের তারা দেখতে দেখতে স্বপ্ন দেখি,
ঘুমের মধ্যে কত রকমের স্বপ্ন—
স্বপ্ন প্রেম হাত ধরাধরি করে পথ চলতে থাকে!


অনেকদিন আগে, উৎসভূমির কিছু নীচে,
সেই নদী ছিল অনেক বেশি খরস্রোতা;
তার দুকূলপ্লাবী জলধারায় মুগ্ধ আমি
দূর থেকে দেখেছি তার নানাবিধ ক্রীড়া;--
সতৃষ্ণ নয়নে কতবার চেয়েছি সেই নদীর কাছে যেতে;
কিন্তু অক্ষম আমি পৌঁছাতে পারিনি সেই নদীর কাছে।


সেদিনের সেই উচ্ছলা স্রোতস্বিনী এখন
মহাজাগতিক নিয়মে হয়েছে বিপুলা,
সময়ের দাগ তার দু-কূলে দিয়েছে লেপে
ভাঙনের কিছু কারিকুরি; সাগরসন্ধানী সেই নদী
তার দু-কূলের অগণন নর ও নারীকে জুগিয়েছে তৃষ্ণার জল,
কাউকে বা দিয়েছে সে শস্য আর ফল।


সেই নদী– আশাবরী সেই নদীর কাছে
এখন আমার প্রত্যাশা-পূরণের গল্প–
সকাল-সন্ধ্যায় আমি এখন সেই নদীর কাছে গিয়ে বসতে পারি,
চাইতে পারি আঁজলা-ভরা তার পবিত্র বারি;
সেই নদী– অনেকদিন আগে দেখা সেই উজ্জ্বলা উচ্ছলা নদী–
চৈতন্য-রূপিনী সেই নদী–
এখন আমার এক পরম আশ্রয়।