।উত্তরাধিকার।


মা বলতেন, বাবা সংসারের কোনো
কাজই করেন না;
শুধু চাকরি আর বাজার ছাড়া।
এই কথা শুনতে শুনতে আমরা বড়ো হয়েছি।
আমরা ভাইবোনেরাও ভাবতাম--
বাবা কোনও কাজের নন!
মা একা-হাতে রাঁধেন-বাড়েন
টুকিটাকি আরো কত কী কাজে মা
ব্যস্ত সারাদিন।


বাবা অফিস থেকে ফিরে বইয়ে ডুবে যেতেন।
মা বলতেন, "এত কী পড়ার আছে;
তোমার তো আর পরীক্ষা নেই!"


বাড়িতে দশটা আলমারি-ভর্তি বই
টেবিলে বই, চেয়ারে বই, বিছানায় বই,
চারদিকে শুধু বই আর বই।
বাবা বলতেন, "জানিস, বই শুধু বই নয়;
বই হল চেতনার সিঁড়ি-- যা বেয়ে
স্বর্গে উঠে যাওয়া যায়।"
বাবা স্বর্গ মানতেন না-- তবু বলতেন এ কথা।
আরো কত কী বলতেন!


আমরা বাবার কথা শুনছি দেখলেই মা
ছুটে এসে বলতেন, "যা, যা, পড়তে যা!"
বাবার কথা তাই আমাদের
শোনা হয়নি তেমন করে;
দরকারি কথার বাইরে তেমন করে
কথাই হয়নি বাবার সঙ্গে।
আমরাও ভাবতাম, বাবার কথাগুলো
কী রকম যেন!


একদিন বাবা চলে গেলেন জীবনের
এই উপত্যকা ছেড়ে।
ততদিনে আমরা বড়ো হয়ে গেছি --
দাদা দিল্লি, বোন মুম্বাই, আমি চেন্নাই;
বাড়িতে মা একা--
সঙ্গে চব্বিশ ঘণ্টার কাজের লোক ।


মনে হল, পারিবারিক পেনশনে মা-র
দিব্যি চলে যাবে।
তাই, বাবার জমানো টাকা ভাগ হয়ে গেল--
তিন ভাইবোন আর মা-র মধ্যে সমান চার-ভাগ।
ভাগ হয়ে গেল বাবার যাবতীয় সম্পদ--
দাদা বলল, "বাবার এই এই জিনিস আমার,"
বোন বলল, "এটা, ওটা, সেটা আমার,"
আমিও কিছু জিনিস আমার বলে
দাবি জানালাম ।
পড়ে রইল শুধু বাবার বইগুলো;--


তিন ভাইবোনের মধ্যে, বাবার বইয়ের
কোনও দাবিদার খুঁজে পাওয়া গেল না!


অরি মিত্র