বিবেক আমাকে বার বার তাড়া করেছে, যা একবার ঘুড়ে আয় সাভার থেকে। দেখে আয় মানবতাকে কিভাবে গলা টিপে হত্যা করেছে রানা ও গার্মেন্স মালিকেরা। কিন্তু আমি সাহস করে উঠতে পারি নি। আমার এমন দৃশ্য দেখার সাহস নাই। এই ঘটনা ঘটার পরে একটা মুহুর্তের জন্য ভুলতে পারছি না। এই পোষ্টটি লেখার মানে কাউকে সমবেদনা জানানো নয়। সমবেদনা কাকে জানাব। এই ঘটনায় যারা প্রান হারালো বা আহত হয়ে বিছানায় পরে পরে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে তাদের না স্বজনদের সমবেদনা জানাব। তারা যা হারিয়েছে ও সমস্ত জীবন যে কষ্ট সাফার করবে এর জন্য সমবেদনা দিলে অপমান করা হবে। সমবেদনা জানানোর কোন ভাষাই তো আমার জানা নাই। আমার কেন আমার মনে হয় না কেউ সমবেদনা জানানোর ভাষা রাখে।

আমার বাবা কৈরে

হত-ভাগা শুনি এক [মায়ের] কথা-
স্বামীকে হাড়িয়ে, ছিল একেলা।
তবুও ছিল- [মায়ের] শান্তনা মনে-
স্বামী- উপহারে রেখে গেছে-
এক মাত্র ছেলে- রাজাকে।

কত না কষ্ট, [মায়ের] শুরু হল-
হাজাড়ো বাঁধা ঠেলে- একাই রহিল।
এক, দুই করে- বহু দিন গেল-
[মায়ের] মনে বুঝি- সুখ ফিড়িল।

দেখতে দেখতে রাজা- বড় হয়েছে-
২০ পার করে ২১শে পড়েছে।
মায়ের কাছে ছেলে বায়না ধরেছে
অনেক হয়েছে [মা] সময় এসেছে-
[মায়ের] মুখে ছেলে হাসি ফুঁটাবে।

মনে মনে রাজা ঠিক করেছে
ঢাকায় গিয়ে অনেক টাকা কামাবে
[মায়ের] অবাধ্য হয়ে রাজা চলেছে
পেছন থেকে [মা] বারে বারে ডাকে।
ফিড়ে আয় বাবা তুই যাছনা দূড়ে
[মা] যাবে মড়ে- তোর কিছু হলে।

ছেলে বলে [মা] তুমি একটুও ভেবো না
তোমার ছেলের সাথে- আছে তার [মা]
অনেক কষ্ট [মা] তুমি করেছ
এবার আমাকে দোয়া তুমি করো।
১-মাস কাজ শেষে দেশে ফিড়িব
তোমাকে তখন [মাগো] ঢাকা নিয়া যাব।


কথা দিয়ে- রাজা, ঢাকা চলে গেল  
[মায়ের] মন যেন থমকে দাড়াল
শুরু হয়ে যায় মায়ের অপেক্ষার পালা
কখন আসবে খবর ছেলে আছে ভালা
পাশের বাড়ির মোবাইল বেজে উঠেছে
ঢাকা থেকে রাজা ফোন করেছে।

ছেলে বলে [মা] কাজ পেয়েছি
সারাদিন কাজ করি, সুখের লাগি
ভেবনা আমি অনেক ভাল রয়েছি
[মা] বলে বাবা- কবে ফিরিবি
ছেলে বলে [মা]- কিছু দিন বাকি
ছেলে [মাকে],  টাকা পাঠাবে
এইতো শেষ কথা [মা] ছেলের মাঝে।

এর পর যা হলো দুনিয়া জানে
মানবতা হার মানে দুর্বিত্তের হাতে
মায়ের মনে নানা ভয় এসে বসে
ছেলের ফোন, কেন? আসে না যে।
  
পাশের বাড়ির চাচা বাড়ি এসেছে
মা বলে কথা কও ছেলের সাথে
ফোন করে চাচা রাজার মোবাইলে
বারে বারে শুধু বন্ধ বলে

মায়ের মনে যেন আর মানে না
ছেলের ফোন কেন ? বাজে না
কোথায় ছেলে আছে, কেমন আছে
আল্লাহ ভাল রাখ আমার রাজারে

এক এক করে পাঁচ দিন হল
খবর নেই কোন ছেলে কই গেল
হতভাগা মা নিজেই জানে না
কোথায় কাজ করে তার ছেলে রাজা

কিভাবে খুজবে মা ছেলে কই আছে
কোথায় গেলে মা ছেলেকে পাবে
৬ দিন বাদে রাজার খবর আসে
ঢাকা থেকে একজন ফোন করেছে
রাজার মোবাইলে চাচার নম্বর পেয়ে।
কি বলবে চাচা রাজার মাকে
ছেলে আর নেই তার এই দুনিয়াতে।

সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসে পরেছে
হাজার হাজার মানুষ চাপা পরেছে
শত শত লোক প্রানে মরেছে
এখন রাজার লাশ মর্গে রয়েছে।


তবে- মানবতা যে মানুষের মন থেকে মড়ে যায় নি- সে পরিচয় আবারো পেলাম। যখন দেখলাম শাহানাকে বাঁচাতে না পেরে- স্বজনদের মতো উদ্ধার কর্মিদের চোখের পানি পরছে। মনের কষ্ট তাদের অশ্রু হয়ে ঝড়ে যাচ্ছে। তখন মানবতার নিদর্শন দেখে কি ভাল লাগছিল বুঝাতে পারব না- অবশ্যই সে সব মানুষদের ধন্যবাদ দিতে চাই। যারা দিন/ রাত কঠোর পরিশ্রম করছে- নিজের বিপদ উপেক্ষা করে, হাজার- হাজার জীবিত ও মৃত মানুষদের ভেতর থেকে বের করে আনছে। এক দিকে পাষন্ড মালিক পক্ষ্য ও রানা গরিব, নিপিরিত, দুস্ত মানুষদের জান কেড়ে নিল- অন্যদিকে উদ্ধার কর্মিরা দুর্ঘটনাগ্রস্থ মানুষদের জীবিত বা মৃত স্বজনদের কাছে তুলে দেয়ার জন্য প্রান পন চেষ্টা করছে। যারা নিজের পরোয়া না করে- মানবতার বেষ্ট নিদর্শনের পরিচয় দিয়ে উদ্ধার কাজ করছে- তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং সমস্ত জাতির পক্ষ থেকে- হাজার, লক্ষ্য, কোটি-কোটি ধন্যবাদ রইল-----যখন কোন স্বজন এসে আপনাকে প্রশ্ন করবে- আমার বাবা, মা, ভাই, বোন, ভাবী, দুলাভাই, ছেলে, মেয়ে কোথায়, তখন তার প্রশ্নের উত্তর কে দিবে। কে দিতে পারবে---মা তার ছেলের বাড়ি ফিড়ার অপেক্ষায়---সে মাকে কি বলবেন- মায়ের মনে অজানা একই প্রশ্ন বছরের পর বছর চলতে থাকবে।  অবশেষে সে মাও তার ছেলের মতো হঠাত করে না ফেরার দেশে চলে যাবে। তবে সেই দেশে মা তার ছেলেকে ফিড়ে পাবে কি পাবে না তা আমরা জানি না- ছেলে হারা এই মায়ের জন্য আপনার কাছে কি? কোন সমবেদনা আছে। নাই- থাকতে পারে না-----