কোয়ারেন্টাইন ( সঙ্গরোধ)


সেই সেদিন একটা দুপুর,
নিঃশব্দে তুমি বিদায় জানালে তাকে,
সেদিনের সেই দুপুরের মতো,
রক্তক্ষরণ ঘটেনি আর আগে।
দশটা বছর, একটা বিছানা, দুটো বালিশ,
রাত্রির ঘোর আধারে, সীমানা ছাড়ো,
তুমি আর সে,
একটা বালিশে দুটো মাথা,
তবুও কিঞ্চিৎ ফাঁকা জায়গা পড়ে থাকে,
একটা বালিশে।
এভাবেই তুমি আর সে,
সেই কতকাল পুইয়ের লতার মতো পেচিয়ে আছো,
তোমরা দুজন।
আজ সেই একটা দুপুর এলো।
তোমার বাড়ির সবচেয়ে অগোছালো, যত্নহীন,
পরশ লাগেনি যে ঘরে। তোমার কঞ্চির মতো সুন্দর,
আংগুলের ডগা গুলো ছুয়ে দেখেনি এতকাল।
আর মনুষ্য প্রজাতির বসবাসের অযোগ্য ঘোষিত ঘরটা,
তুমি আংগুল তুলে দেখালে আজ।
তোমার টলমল দুটো চোখ,
চোখের গভীরে বাধের মতো উপচানো জল।
তার মুখে নিস্প্রভ শুকনো মেকি হাসি,
তুমি আর সে জানো সেটা কতটা অপ্রতুল,
শুধু তোমাকে ভোলানোর জন্য।
আজ সেই একটা দুপুর এলো।
দুটো দরজা বন্ধ, দক্ষিণের জানালা শক্ত করে আটকানো,
সেই জানালার কাঁচ বেয়ে উপচানো রোদ,
দুরের নীলাকাশ, মেঘের বুকে পাখির স্বাধীন ডানা ঝাপ্টা।
আর সে কতটা উদগ্রীব পরাধীন মানুষের মতো হাহাকারে।
স্বেচ্ছায়, নিঃসঙ্গ, নিসর্গ, নিঃশব্দে  সঙ্গরোধ।
তুমি আর সে কতটা একলা করেছ নিজেকে।
একটা বিছানা, দুটো বালিশ, তোমার ঘুমহীন শয্যা,
খা খা শুন্য একটা বালিশ।
মাঝরাতে আবার কাচের দরজার কাছে গিয়ে দাড়াও,
চোখাচোখি হয়, চোখ পড়ে দুজনের।
গলগল করে,
অঝোরে কাঁদো তুমি আর সে,
শিশুর মতো তোমরা দুজন।
জ্বরের প্রকোপে জবুথুবু হয়ে হাত পা মুড়ে,
কাতরাতে কাতরাতে সে মরছে আজ।
তোমার হাতটা তার কপাল ছুতে আহাজারি,
বুকভাঙা আত্মচিৎকার সারা বুক জুড়ি।