যখন আমি ছোট ছিলাম, এইতো বছর-পঁচিশ আগের কথা
আজ আমি তিরিশ ।  
যাদের বয়স হয়েছে সবাই বুঝে উঠতে পারেন – আজ ঈশান কোণে
কালো মেঘের আনাগোনা ।
রবীন্দ্রনাথের একটা লেখা সবাই আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে থাকেন
-ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাইরে ।
বাঁশের বেড়ার বুকে মুখ লুকিয়ে বাহিরে চেয়ে দেখি
বৃষ্টির গুড়ুম গুড়ুম শব্দের মাঝে চারিপাশ স্তব্ধ  


বাড়ির পাশেই ছোট ছোট কয়েকটা বালুচর ছিল
সবকটাই ভেসে গেলো ঝড়ে -এখন খেলব কোথায় !


বাড়ির লোকজন কাঁথা-কম্বল নিয়ে ঘরের চারকোনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
কেউ হরির নাম গাইছে, কেউ এমনিই সস্তা গল্প করছে
মা চুলায় ব্যস্ত,কাঁঠালের বিচি ভাঁজছে
বৃষ্টিতে লাকড়ি এবং চুলা দুটোই ভেজা ভেজা
বাঁশের চোঙা দিয়ে ফুঁ দিতে দিতে মায়ের কাশি শুরু, ভেজা ভেজা চোঁখ
কাপড়ের আচল দিয়ে চোখ দুটো ঢেকে আবার ফুঁ দিতে লাগল
কোনোরকমে কাঁঠালের বিচি ভাজা হলো, এখন চামড়া ছাড়ানো
সবাই হাত বাড়ালো, আমিও গেলাম পাশে____মুহূর্তেই কিছু বিচি হজম হয়ে গেল
হলুদ-লবন জলে সাতলানো -গল্প জমে উঠল, সবার কাঁথাও গরম হয়ে উঠল ।


এমন একটা আরামদায়ক পরিবেশে হটাৎ মায়ের গলা
এবার বইটা নিয়ে বোস, সামনেই তো পরীক্ষা
মনটা ক্ষণিকের জন্য খারাপ হয়ে উঠল, তাও বসলাম পড়তে
"বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর, নদেয় এলো বান"-
মনটা তৎক্ষণাৎ চলে গেল বাইরে


বজ্র নামের দৈত্য যখন মুহুর্মুহু গর্জন করে
ঘর কাঁপে, মনটাও ভয়ে কাঁপে
বিদ্যুতের চমক বেড়ার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারে
ধীরে ধীরে বৃষ্টি বন্ধু পাতলো বাতাসের সাথে
জোরে বাতাস বইছে, মাঝে মাঝে কেঁপে ওঠে ঘরের খুঁটি
দেখতে দেখতে ঘরের ভিতর অন্ধকার নেমে এলো
বাতি ধরাতেই বাতাস এসে নিভিয়ে দেয়
অন্যদিকে কেও বাটি-গামলা নিয়ে ঘরের একোণে ওকোণে ।
চালের ফুটো দিয়ে গড়িয়ে পড়া জলের ফোঁটায় -বিছানাও গেলো ভিজে
আম গাছের ডালটা ঝাঁপিয়ে পড়লো চালে
হুহু করে বৃষ্টির দল ছুটে আসে ঘরের ভিতর
আজকের খাওয়া এবং ঘুম দুটোই বৃষ্টি কেড়ে নিলো ।


পাশের বাড়ির ছেলেমেয়ে সবার হাতে কাগজের নৌকা
ঝড় থামলেই জলের স্রোতে ভাসবে তরী
ওদের বাড়িটা মাঠির দেওয়ালের, অনেক মজবুত


ঘন কালো আকাশ, পাগলা হাওয়া -একটু শান্ত হলো
এখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে
মাকে বললাম শি করে আসি -এক দৌড়ে হাওয়া
মৃদুমন্দ বাতাস, হালকা শীত শীত ভাব -বাইরের পরিবেশটা বেশ আরামদায়ক
বৃষ্টির স্বাদ পেয়ে দুলাল কাকার মুখে সুন্দর একটা খুশি ভেসে উঠলো
'এইবছর কেও না খাইয়া মরতো না'
বেশ কিছুদিন আগে পুকুরের জল চুরি করেছিল রোদ
বৃষ্টি সেই জল আবার ফিরিয়ে দিলো পুকুরে, সেই আনন্দে ব্যাঙ গাইছে বাউল
শামুকের দল খেতের আলে আলে
মানুষ এখন ব্যাঙ আর শামুক ধরতে ব্যস্ত___ রাতের খাবার !
সূর্যটাকে কেউ যেন একটু সিঁদুর পরিয়ে পশ্চিমে ছেড়ে দিলো
খুশিতে এঘর ওঘর ঘুর ঘুর করে কয়েকজন বন্ধু যোগাড় করলাম
কিছু বকুনিও পেলাম বন্ধুদের বাড়ির ভেতর থেকে
যাই হোক চুক্তি হলো আম কুড়ানোর, পাশের সবকটা গাছের নিয়ে গিয়ে এলাম
দৌড়ঝাপ হলো, কাড়াকাড়ি হলো আম নিয়ে___ এবছর আগের মতো আম আসেনি
কিন্তু বেশ কিছু কাঁঠাল পড়ে ছিল পাশে । একেবারেই নরম কুশ -
তাই বিচি নিয়ে গেলাম কুশ ছাড়িয়ে, সামনের বৃষ্টিতে আসর জমবে


কাগজের নৌকা ভেসে ভেসে উঠোন থেকে খালে
অমনিই আমগুলো রেখে ঝাঁপ দিলাম নৌকা ধরতে
খালের একপাশের জল খানিকটা ঘোলাটে হয়ে উঠল
ভাবলাম আর একটু ঘোলাটে করে দিই, বাকিরাও দিলো ঝাঁপ
মাথার চুল আর প্যান্ট নালার জলে, নালার জল প্যান্টে
কালকে সোমবার !
এদিক ওদিক ঘুরতে থাকলাম ! কিছু সময়ে যদি প্যান্টটা শুকোয়, বাড়ি যাব
রোদ নেই, গায়ে তাপও নেই, মন আমার বুঝতে পারল আজকে মার আছে
বেশ কিছু আম আর কাঁঠালের বিচি, কী করে নিয়ে যাই !
প্যান্ট হয়ে উঠল ব্যাগ, আমি ছাড়া সবকিছু প্যান্টে
একদিকে আম পাওয়ার খুশি, অন্যদিকে মারের ভয়
ভয়ে ভয়ে গেলাম বাড়িতে -
মা দেখে হেসে বলল, কত বড় গাধা, প্যান্ট ভিজাইয়া আম আনছে
কালকে ল্যাংটা যাইস স্কুলে !