একদা যাত্রা পথে ডোলি পাড়ার একটি মেয়ে
একটু খানি আল পথ থেকে পা ফসকে পড়তে দেখে
ঝাঁপটা মেরে ধরে ছিলাম
ধরতে গিয়ে বুজে ছিলাম তার শরীর কত নরম
মা গো বলে তাল গাছের মত স্থবির হয়ে দেখতে ছিল ওর পড়ে যাওয়া পুটলিতে।


সে নীয়ে ধনি পাড়ার ব্রাহ্মণ বন্ধু রজতের সাথে গল্প করেছিলাম
আর ওর চক্ষু লাল শিমুলের মত করে বলে ছিল
করেছিস কি? সে তো নমশূদ্র
এ নীয়ে তর্ক করে তিন মাস কথা বন্ধ ছিল তার সাথে।


বন্ধুর এমন হীন কথায় মন কেমন যেন
নজরুলের মত বিদ্রোহ করছিল এতো অপমান!
তখন বয়স অল্প, হাজারো হলেও ঘটনা মেয়ে সংক্রান্ত ।


খালাতো ভাই মাদ্রাসা টাইটেল পাস
অতি সাধারণ ধরনের চরিত্র
গল্প করে বলেছিলাম, এটা কি কোনও অপরাধ?
বন্ধু আমার সাথে ঝগড়া করেছে।
উনি আশ্বস্ত করে ছিলেন মানুষের মধ্যে পার্থক্য নেই
ভাল কাজের ফল হয় ভাল।


আজ হয়ত আল পথ উন্নত হয়েছে
কালো পিচে ঢাকা না হলেও হয়ত বড় হয়েছে
হয়ত এমন মেয়েরা পথ খোজে পেয়েছে
বাবার জন্য আর গামছায় মোড়ে কলা পাতায়
খাবার পুটলি নিয়ে যায় না কৃষি জমিতে।


ভাবনার গাছ গুলো হয়ত বাংলার আকাশ ছুঁয়েছে
অনেক ফল ফলেছে
গ্রামের পথ-কুড়ি শিশুরা বাতাপি লেবু নীয়ে হয়ত
আর ফুটবল খেলে না।


এখন যুগের পরিবর্তন
এই লন্ডন শহরেও এমন মেয়েরা হুমড়ি খায় ঠিক ই  
আইপডের গানের বিটে কানে স্টেরিও শুনে ভুলে যায়  
হাঁটছে কোথায়, দাঁড়িয়েছে কোথায়
স্টেশনের টিউবের ভিতর না লোকের ভিড়ে, ভুলেই যায়।


সেই এমন একটি মেয়ে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে
উঁচু হিল জুতা  মচকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেতে দেখে
আবার ও ধরতে হলো আরেক টা মেয়েকে
অল্পের জন্য রক্ষা পেল কিন্তু আইপড পড়ে চুরমার
অহ নো বলে হতবাক!


কি বিষম স্মরণশক্তি
কত যুগ আগের সেই মেয়ের ঘটনা পুনরাবৃত্তি
এই মেয়ে সাদা ব্লন্ড পার্থক্য মুটেই নেই
নরম লতার মত লজ্জা নত লাল মুখে
সরি থ্যাংক ইউ বলে বিদায় নিলো।


পাশের লোক গুলো  ধন্যবাদে হেন্ডসেইক করতে চাইলো  
কেউ পিটে হাত দিয়ে উয়েল ডান ও বল্লো।


চলার পথে বর্ণালী বাংলার সবুজ ঘাসের মধ্যে
শব্দহীন ওত পাতা  চিতার মত চেয়ে থাকা
কত গুলো বীভৎস মুখ ভেসে উঠলো
জানি না এতো যুগ পরে আজো কি এসেছে
কোন পরিবর্তন
ধনী গরিবের পার্থক্য  অথবা জাত বিজাতের অপমান।


মুজাহিদ চৌধুরী। লন্ডন।২৫। ২০১৭