ওমর খৈয়ামের(মৃত্যু১১২৩)মূল ফার্সিতে রচিত রুবাইয়াত থেকে তুলনামূলক বিশ্লেষণ-
মোহাম্মদ আলী চৌধুরী
ওমর খৈয়ামের(মৃত্যু১১২৩)মূল ফার্সিতে রচিত রুবাইয়াত থেকে অনূদিত কাজী নজরুল ইসলাম (১৯৩৩)ও ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৪২)এর রচনার তুলনামূলক বিশ্লেষণ :-
একজন সার্থক সঙ্গীত শিল্পীর সার্থকতা বহুলাংশে নির্ভর করে একজন তবলা বাদকের উপর। নজরুলের ঈশ্বর প্রদত্ত কবিত্বশক্তির উপর যুক্ত হয়েছিল সৈয়দ মুজতবা আলীর অভূতপূর্ব তবলা বাদন।প্রচারেই প্রসার হয়েছে নজরুলের রুবাইয়াতের অনুবাদের। কান্তি ঘোষ,নরেন্দ্র দেব ও নজরুলের যেখানে কম পক্ষে ১০ টি সংস্করণ হয়েছে সেখানে উপরোক্ত তিনজনের পরে প্রথম সংস্করণ (১৯৪২)এর পরে আর কোনোসংস্করণই বের হয়নি।তিনি তাঁর বইয়ের বিশাল পাণ্ডিত্যপূর্ণভূমিকা নিজেই লিখেছেন। বইটির তিন ভাগের এক ভাগ হলো অনুবাদ আর বাকি দুই ভাগ ভূমিকা ও টিকা টিপ্পনী।নজরুল ফার্সি জানতেন না।এক ফার্সি জানা মৌলভির বাংলা তরজমা শুনে তিনি কবিত্ব গুণে অনুবাদ করেছেন।অন্যদিকেশহীদুল্লাহ্ ফার্সি সহ ১৮ টি ভাষায় বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন।হাতেলেখা মূল পাণ্ডুলিপি থেকে অনুবাদ করেছেন। আমি নজরুল ও শহীদুল্লাহর অনুবাদ পাশাপাশি তুলে ধরবো যাতে আপনারাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কারটা উত্তম। সৈয়দ মুজতবা আলীযখন মন্তব্য করেছিলেন তখন শহিদুল্লাহর বইই ছাপা হয়নি।আমি দিচ্ছি ফার্সি থেকে অনূদিত এডওয়ার্ড ফিট্সজেরাল্ডের(১৮৫৯) ইংরেজি অনুবাদ যা শামসুল আলম
সাঈদের বইতে পেয়েছি:-
Khayyam, who stiched the tents of science.
Has fallen in grief's furnace and been suddenly burned.
The shears of fatehave cut the tent rope of life.
And the broker of Hope has sold him for nothing.
কাজী নজরুল ইসলাম(১৯৩৩)এর অনুবাদ নম্বর-৯৮
খৈয়াম-যে জ্ঞানের তাঁবু করলো সেলাই আজীবন,
অগ্নি কুণ্ডে পড়ে সে আজ সইছে দহন অসহন।
তার জীবনের সূত্রগুলি মৃত্যু- কাঁচি কাটলো হায়;
ঘৃণার সাথে বিকায় তারে তাই নিয়তির দালালগণ।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লার(১৯৪২)অনুব­াদ-৮০(R.39)খয়্যাম বটে দিবারাত্র দর্শন-তাঁবু করত সেলাই,প'ড়ে গিয়ে শোকের চুলায় জ্ব'লে পুড়ে হয়েছে ছাই।কেটে দেছে যমের কাঁচি জীবনের তার রজ্জু সকল,আশা-দালাল বেচে তারে মূল্য কিছুই লাভ করে নাই।
সৈয়দ মুজতবা আলীর(১৯৩৩) অনুবাদ যা নজরুলের বইয়ের ভূমিকায় আছে:-
জ্ঞান - বিজ্ঞান ন্যায় দর্শন ডেলাি করিয়া মেলা,
খৈয়াম কতনা তাঁম্বু গড়িল। এখন হয়েছে বেলা
নরককুন্ডে জ্বলিবার তরে। বিধি- বিধানের কাঁচি
কেটেছে তাঁম্বু- ঠোক্কর খায়,পথে প্রান্তরে ঢেলা।
শামসুল আলম সাঈদের(২০১১) অনুবাদ নম্বর- ১০৭
দর্শনের তাঁবু সেলাই খৈয়ামের ঘটেই ছিল খট খটে,
দুঃখানলে হঠাৎ পুড়ে ছটফট কপাল লিখন তাঁর বটে।
জীবন বাজার থেকে পাশ কাটিয়ে এ বাঁচার তাঁবু
নিয়তি দালাল মৃত্যুর হাতে মূল্য ছাড়াই বাটে।
আমার(২০১৯) অনুবাদ:-
খৈয়াম,যিনি জ্ঞানের তাঁবু করলেন সেলাই সারা জীবন জুড়ে,
তিনি পড়লেন অগ্নিকুন্ডে,মরলেন সেই আগুনেই পুড়ে।
বিধির বিধান লিখা ছিল ভালে,তাইতো কাটলো জীবন তাঁবুর রশি,
আশার দালাল,করলো হালাল,বেঁচলো মাগনা, অনেক দূরে।
রচনাকাল:-
ঢাকা০৯/০৬/১৯
বেলা৩-৪০
পাঠক, মন্তব্য কলামে জানান কার অনুবাদ বেশি ভালো লেগেছে?