ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর অনুবাদকৃত রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়ামের ১০১ হইতে ১১৫ পর্যন্ত ১৫টি অনুবাদ।
Mohammad Devid Krishna Baruaএর সৌজন্যে:-
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১০১(R-85)
আছে যারা বুড়ো কিংবা আছে যারা নওজোয়ান,
আপন আপন খেয়াল পিছে দৌড়ে ফিরে সব হয়রান।
এই দুনিয়ার বাদশাহীটি চিরস্থায়ী নয় কভু,
গেছে তারা,যাব আমরা,শুধুই আসা আর প্রস্থান।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১০২(R-103)
আর কতদিন বন্দী রবে বর্ণগন্ধের কয়েদ ঘরে?
ফিরবে তুমি কুরূপ কিংবা সুরূপদেরে তল্লাশ করে।
হও না তুমি তীর্থবারি কিংবা সুধা সঞ্জিবনী,
যেতেই হবে অন্তিমেতে মৃত্তিকারি অভ্যান্তরে।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১০৩(R107)
এই কালেতে লভ্য কিছু নাইক আর ত বুঝি জ্ঞানে,
ভবের মজা কেউ লোটে না বিনে মূর্খ আর অজ্ঞানে।
দূর ক'রে দাও সামনে থেকে জ্ঞান ও বিজ্ঞান আপদ বালাই,
হয়তো দিবে নেক নজর কাল দয়া ক'রে আমার পানে।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১০৪(109)
কিবা খুশীর প্রাণটি তাহার নাইক যাহার খ্যাতির বালাই,
পরণে যার রেশম,সার্টিন কিংবা সাধুর আলখাল্লা নাই।
ঈগল পাখীর মতন ওড়ে দুই লোকেরি ঊর্দ্ধে সে জন,
পেঁচার মত সার করে না এই দুনিয়ার ছোট কোণটাই।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১০৫(R.130)
আর কতকাল আয়ু তোমার কাটিয়ে দিবে আত্মপূজায়?
কিংবা তারে করবে নষ্ট অস্তি-নাস্তির দুর্ভাবনায়?
পিও সুরা,দুঃখ ভোগই যে জীবনের শেষ পরিণাম,
উচিত তারে কাটিয়ে দেওয়া নিদ্রা কিংবা মদের নেশায়।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১০৬(R.159)
দু'দোরওয়ালা এই সরাইয়ে মানুষের হায়!ভাগ্য যখন,
হৃদয় করা রক্তে রাঙা কিংবা করা প্রাণ বিসর্জ্জন।
কিবা খুশীর জীবনটি তার নামজাদা যে হয় নি ধরায়!
ধন্য যে জন মায়ের গর্ভে করে নিক জন্মগ্রহণ।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১০৭(R.261)
ভাগ্যের খেলার ময়দানে তুই যেমন ধারা পোলোর বল,
চুপ মেরে থাক,যেমন চালায় ডাইনে বাঁয়ে তেমনি চল্।
যে জন তোরে ফেলেছে এই দৌড়-ঝাঁপের হাঙ্গামায়,
সেই ত জানে,সেই ত জানে,সেই ত জানে সেই কেবল।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১০৮(R.258)
তোমার ওগো!অপার শক্তি করেছে মোর দেহ সৃজন,
তোমার অসীম অনুগ্রহ করেছে মোরে লালন পালন।
করব শত বর্স পাপ-ই করতে শুধু তোমায় পরখ---
কোনটি বেশী?তোমার দয়া কিংবা আমার পাপ অগণন?
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১০৯(R.251)
থাকত যদি খোদার মত ধরায় আমার এক্তিয়ার,
ভেঙে চুরে দিতাম ফেলে সমস্তটা এক্কেবার।
করতাম আমি বিশ্বসৃষ্টি নূতন ক'রে ফের এমন,
অনায়াসে যোগ্য জনে পূর্ণ করত বাঞ্ছা তার।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১১০(R.250)
মত এবং ধর্ম্ম প্রশ্ন নিয়ে রয় সদা কেউ চিন্তাকুল,
অনুমান ও প্রমাণ নিয়ে কেউ নিশিদিন রয় ব্যাকুল।
হঠাৎ আসে ঘাঁটি হ'তে ঢেঁড়রা পেটার জোর আওয়াজ---
"ওরে মূর্খ, এ পথও নয়,ও পথও নয়,দুই যে ভুল।"
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১১১(R.274)
গড়েছে কার হাতটি প্রিয়ে, তোমায় হেন মনোহর?
হারিয়ে দেহ তোমার রূপে পূর্ণিমারও শশধর।
ঈদের দিনে সুন্দরীরা মুখটি করে সুশোভন,
তুমি কিন্তু মুখের শোভায় ঈদকেই কর শোভাকর।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১১২(R.215)
আমরা দেব হাতে তালি সুরের তালে বাদ্য সনে,
নাচবে নাক নইলে চরণ দুখের শিরে হৃষ্ট মনে।
উঠব মোরা,নিশ্বাস নেব ঊষাকালের শ্বাসের আগে,
নিশ্বাস নেবে অনেক ঊষা,আমরা রব শ্বাস বিহনে।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১১৩(R.217)
শঙ্কা করি দীর্ঘকাল আর রইব নাক এই ভুবনে,
মেলা মেশা সাঙ্গ হবে প্রাণের যত বন্ধু সনে।
নিচ্ছি যে শ্বাস,গণ্য করি সেটা বড়ই ভাগ্য কথা,
হয় ত বা এই শ্বাসের পরে শ্বাস নেব না আর জীবনে।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১১৪(R.218)
শোন প্রিয়ে,তুমি আমি বৃত্ত-আঁকা কম্পাস মত,
মাথা মোদের দুই যদিও,দেহ মোদের এক নিয়ত।
একই বিন্দুর চতুর্দ্দিকে আমরা আঁকি বৃত্তখানি,
অবশেষে দুটী মাথা একই স্থানে হয় সংহত।
ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর(১৯৪২)অনুবাদ-১১৫(R.225)
রাখবে কেটা গুপ্তকথা, বলব আমি তারে একদম,
আদিম কালে সৃষ্ট হ'ল কেমন ক'রে মানব আদম।
দুঃখ কষ্টের জল কাদাতে সৃষ্টি হ'ল দেহ তাহার,
চ'লে ফিরে একটুখানি গুটিয়ে নিলে আবার কদম।