আজ কাল ঔষধ ছাড়া ঘুম ধরে না
একটা  লোনাপাম ফাইভ আঁধ কাপ জল দিয়ে গিলে-
অবস হয়ে পড়ে থাকি।
কখন যে ভোর হয় কিছু বুঝি না।
প্রতিদিন চোখ খোলে দেখি দু একটা পাখির লাফালাফি,
আর যানজটের ঘ্যাচ্-ঘ্যাচানির মাঝে
ট্রাফিক সিগন্যাল ভাঙার দৃশ্য।


কিন্তু গত রাত যে  কি বিভ্রাটহলো –
একটি স্কুল ফেরৎ মেয়ে সোজা এসে
আমার দু’ গালে সজোরে দুটি চড় মারলো ।
আমি আঁতকে, “মা গো!” বলে চিৎকার করি।
আমার ঘুম তখনো ভাঙেনি
সাহস নিয়ে বলি-
কি হলো ব্যাপার! কে তুমি? এতো স্পর্ধা তোমার!


সে কোন উত্তর দিল না-
বরং আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো!
আমি আবারো প্রশ্ন করলাম-
“কে  তুমি? -তুমি কেন কাঁদ রমণী?”
নিমেষের মধ্যে রুদ্র মূর্তি নিয়ে উত্তর করলো-
“তবে শুনো ,তবে শুনো-
আমি কমলা; কমলা ভট্টাচার্য আমার নাম-
বাংলা ভাষা আন্দোলনের একমাত্র নারী শহীদ আমি।
১৯৬১  খৃষ্টাব্দে ১৯ মে কাছাড়ের শিলচর শহরে,
পুলিশের গুলিতে আমি শহীদ হই,
আমি  পৃথিবীর প্রথম মহিলা ভাষা শহীদ।
আমার বয়স ছিল মাত্র ষোল বছর-
অপরাধ! - মাতৃ ভাষা বাংলার স্বীকৃতি চেয়েছিলাম’’।


আমি বলি , “ কোন প্রয়োজনে দিলে তুমি প্রাণ
কোটি বাঙালির তরে? আর কি ছিল না কেউ ঐ
নরমেদ যজ্ঞের তরে!”
হেসে বলে কমলা, “না গো, না-
আমি  শুধু  একা নই - আরো আছে আমার ভাই-যারা
কুমুদ রঞ্জন, চন্ডীচরন, তরণী, বীরেন্দ্র, শচীন্দ্র
সুকোমল, সত্যেন্দ্র, হিতেশ আর কানাইলাল
পরে এলো সুদেষ্ণা বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরী ভাষা শহীদ তিনি।


আমরা প্রতিরাত এখনো মিছিল করি-
মিনার চত্বরে, মানুষের ঘরে ঘরে
মাতৃভাষা সুরক্ষার তরে।
দেখি দিকে দিকে আগ্রাসন, নিষ্পেষন, পদলেহন
আর স্বার্থের আজুহাত।


সে এক মুহুর্তে আমার বুকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে
বেরিয়ে  গেল-
যেতে যেতে বলে গেল-
“ যদি পারো জেগে উঠো
নয়তো শুয়ে থাকো;
তবে তুমি জেনে রেখো-
মাতৃভাষার তরে আমি ফিরে আসি বারে বারে
ডেকে নেবো আবারো  তোমারে ভাষা যুদ্ধের তরে”।