উড়িল আকাশে মেঘ গরজি ভৈরবে;—
            ভানু পলাইল ত্রাসে;
            তা দেখি তড়িৎ হাসে;
            বহিল নিশ্বাস ঝড়ে;
           ভাঙ্গে তবু মড়-মড়ে;
           গিরি-শিরে চূড়া নড়ে,
                      যেন ভূ-কম্পনে;
অধীরা সভয়ে ধরা সাধিলা বাসবে।
          আইল চাতক-দল,
          মাগি কোলাহলে জল—
“তৃষায় আকুল মোরা, ওহে ঘনপতি!
এ জ্বালা জুড়াও, প্রভু, করি এ মিনতি।”
বড় মানুষের ঘরে ব্রতে, কি পরবে,
ভিখারী-মণ্ডল যথা অাসে ঘোর রবে;—
         কেহ আসে, কেহ যায়;
         কেহ ফিরে পুনরায়
         আবার বিদায় চায়;
         ত্রস্ত লোভে সবে;—
         সেরূপে চাতক-দল,
         উড়ি করে কোলাহল;—
“তৃষায় আকুল মোরা, ওহে ঘনপতি!
এ জ্বালা জুড়াও জলে, করি এ মিনতি।”
         রোষে উত্তরিলা ঘনবর;—
“অপরে নির্ভর যার, অতি সে পামর!
         বায়ু-রূপ দ্রুত রথে চড়ি,
         সাগরের নীল পায়ে পড়ি,
         আনিয়াছি বারি;—
         ধরার এ ধার ধারি।
         এই বারি পান করি,
         মেদিনী সুন্দরী
         বৃক্ষ-লতা-শস্যচয়ে
         স্তন-দুগ্ধ বিতরয়ে
         শিশু যথা বল পায়,
         সে রসে তাহারা খায়,
অপরূপ রূপ-সুধা বাড়ে নিরন্তর;
তাহারা বাঁচায়, দেখ, পশু-পক্ষী-নর।
        নিজে তিনি হীন-গতি;
জল গিয়া আনিবারে নাহিক শকতি;
        তেঁই তাঁর হেতু বারি-ধারা।—
        তোমরা কাহারা?
        তোমাদের দিলে জল,
        কভু কি ফলিবে ফল?
       পাখা দিয়াছেন বিধি;
       যাও, যথা জলনিধি;
       যাও, যথা জলাশয়;—
       নদ-নদী-তড়াগাদি, জল যথা রয়।
       কি গ্রীষ্ম, কি শীত কালে,
       জল যেখানে পালে,
সেখানে চলিয়া যাও, দিনু এ যুকতি।”
       চাতকের কোলাহল অতি।
       ক্রোধে তড়িতেরে ঘন কহিলা,—
      “অগ্নি-বাণে তাড়াও এ দলে।”—
       তড়িৎ প্রভুর আজ্ঞা মানিলা।
      পলায় চাতক, পাখা জ্বলে।
যা চাহ, লভ সদা নিজ-পরিশ্রমে;
এই উপদেশ কবি দিলা এই ক্রমে।