সদা হাস্যোজ্জ্বল আবেদ আলীর আজ ভীষন মন খারাপ
পাত্র পক্ষ তার মেয়েকে দেখতে এসেছিল
কিন্ত; ওরা মেয়ে দেখছিল না কোরবানীর হাটের গরু দেখছিল
আবেদ আলী ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না।
দাঁত দেখতে কেমন! হাসলে কেমন লাগে! চুলগুলো কতটা লম্বা!
একটু হেটে দেখাও তো মা, রান্না জানো তো? আরো কত কি.....
রাগে ক্রধে থরথর করে কাঁপছিল আবেদ আলী
কিন্ত তা প্রকাশ করার কোন উপায় ছিল না তার
কারণ; আবেদ আলী যে মেয়ের বাবা!


ধর্মভীরু আবেদ আলী বাসায় মৌলভী রেখে
পরম যত্নে মেয়েকে কোরান পড়া শিখিয়েছিলেন,
বিধি বাম! পাত্র পক্ষ কোরান তেলাওয়াত শুনেই ক্ষান্ত হল না
সুরা আর রহমানের বাংলা অনুবাদ জানতে চেয়ে
স্কুল পড়ুয়া মেয়েটাকে বড় বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিল
যদিও আবেদ আলীর মনে সন্দেহ ছিল
ঐ সুরার অনুবাদ পাত্র পক্ষের মধ্যেও কেউ জানেন কিনা!
তার ইচ্ছে করছিল পাত্রকেও একই প্রশ্ন করে
সুরা আর রহমানের বাংলা অনুবাদ
কিন্ত! সে যে একদম অ-শোভনীয়
কারণ; আবেদ আলী যে মেয়ের বাবা!


ষোড়শী মেয়েটাকে বিয়ের পিড়িতে বসানোর
কোন ইচ্ছাই ছিলনা আবেদ আলীর
শুধু সমাজের চোখে মেয়েটা অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল ।
পাড়ার বখাটেদের উৎপাতের প্রতিকার চাইলে
এই সমাজ তাকে জবাব দিয়েছিল
গাছে ফল ধরলে লোকে দু’একটা ঢিল তো ছুড়বেই
ভালো; মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দাও।
প্রতিকারের ভাষা আবেদ আলীর ঠিকই জানা ছিল, কিন্ত ..
কি করে সম্ভব! আবেদ আলী যে মেয়ের বাবা!


পাত্র পক্ষ মেয়েটার গায়ের রং, বয়স, উচ্চতা
খুব দক্ষতার সাথে মাপঝোপ করছিল
সু-পাত্রী হতে হলে যা যা অপরিহার্য সেসব খুঁজে দেখা
কিন্ত পাত্রের ক্ষেত্রে ওসব পরীক্ষা একদম বেদরকারী
পাত্র অতি যোগ্য হলে মেয়ের বাবার খরচটাই বরং বাড়ে
আত্মীয়-প্রতিবেশীর চাপে মেয়েটার ইচ্ছা অনিচ্ছার কথাও
যেন গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছিল আবেদ আলীর কাছে
মেয়েটার অধ্যাপিকা হবার স্বপ্নের কথা যেন ভুলেই যেতে হল তাকে
কারণ; আবেদ আলী যে মেয়ের বাবা!


পাত্র পক্ষ যৌতুক চান না
তবে পাত্রের যোগ্যতার স্তর বুঝিয়ে, কি এক অদৃশ্য তালিকা
আকার ঈঙ্গিতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন
মেয়েটাকে বিছানায় পড়ে ডুকড়ে ডুকড়ে কাঁদতে দেখে
সদা হাস্যোজ্জ্বল আবেদ আলীর মনে কালো মেঘ
যেন মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে ঝরছিল।
এই সমাজ মেয়েটাকে নিজের মত করে বাঁচতে দেবে তো!
নাকি এমনি করেই সারাজীবন ডুকরে ডুকরে কাঁদবে
ঘুনে ধরা সমাজটার পাজরে লাথি মেরে
মেয়েটার হাত ধরে উঠে দাড়াতে ইচ্ছে করে আবেদ আলীর,
প্রান খুলে বাবা মেয়ের দম ফাটানো হাসি হাসতে ইচ্ছে করে,
ইচ্ছে করে ইচ্ছে ডানায় ভর করে দিগন্ত জুড়ে উড়তে
কিন্ত এখানে এ যে অসম্ভব!
কারণ; এই সমাজে আবেদ আলী একজন মেয়ের বাবা!!