কোরবানকে চেনেন আপনারা?
আপনাদের চেনার কথা।  
আপনারা যারা নানান কাজে
ফাইল পাশ করাতে গিয়েছেন বড় অফিসে।
কোরবান ওই অফিসের
কি একটা পদে আছে!
বড়বাবুরাই জানেনা।
আমরা আর কি জানি।
বেশভূষায় পিয়ন পিয়ন লাগে।


এই পোষাকের লোক কর্মকর্তা
আর ওই পোষাকের লোক কর্মচারী।
শিখিয়েছে এই ব্রিটিশোত্তর সমাজ।
চোখে আংগুল দিয়ে।


কোরবান পিয়ন।
কোরবান তথাকথিত কবিতা জানেনা।
কোরবান পিয়ন।
কোরবান কে নিয়ে কেউ কবিতা লিখেনা।


কোরবান কোর্ট পড়ে।
কোর্টে দুইটা বোতাম।
একটা বোতাম ছেঁড়া
আরেক বোতাম ফাটা।
সেলাই আটকে আছে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের মতো।


কোরবান লিখতে জানে।
কলমের কালির দাগ
তার তের বছর আগে কেনা কোর্টে
আজো দেখা যায়।
কবিতার কালি কি দেখা যায়
কবির পাজামায়?


কোরবান কি পিয়ন?
এই প্রশ্নের উত্তরে একজন বললে,
"বাবু,  ও তো মাস্টর রোলের কামলা।"
আমার কুঁচকে যাওয়া ভ্রু দেখে সে  বললে,  "না মানে কর্মচারী।"


কোরবান ফাইল ভালো বোঝে।
কোন ফাইলের কত ওজন?
কোন ফাইলের ঘুষ কেমন?
বড়বাবুর চাকর সরকারি কর্মচারী কোরবান।


কোর্টের বুকপকেটে ম্যাটাডোর কলম।
লাল ও কালো।
কোরবান হাত পাতে না।
কোরবান তবু মজার মানুষ।
কোরবান গান গায়।
বিবেকের গান।


বড়বাবুরা কোরবানের পিঠ চাপড়ে দেয়।
"ভালো বলেছিস!ভালো গেয়েছিস!"


ঘুষের টাকার হিসেবের জটলায়
বড়বাবুর মাথা গরম।


"এই শুয়োরের বাচ্চা,  
তুই নিছিস আমার পাঁচশো টাকা।"
কোরবান হো হো স্বরে হাসে।
হাত দিয়ে জীর্ণ কোর্টের ফুটো পকেট বের করে সজোরে বলে, "বাবু এর মধ্যে আছে আমার নদীভাংগা তেতাল্লিশ বিঘা জমি।
এর মধ্যে আছে।
এর মধ্যে আছে।"


কোরবানের চোখের কোণে দাগ।
কোরবানের কোর্টে দাগ।
কোরবানের পোষাক ধুয়ে দিলেও
যে দাগ শুকোয় না।
মেশে না।


মাঝে মাঝে কোরবান কে কবি কবি লাগে।
মাঝে মাঝে তিনি আমার টেবিলে আসেন।
আমি তাঁর চোখের দিকে তাকাতে পারিনা।
আমি শুধু দেখি
তাঁর "তেতাল্লিশ বিঘা জমি"।