হঠাৎ তাঁর সাথে দেখা ,
সেই রাঙা পলাশ ফুলের
বড় গাছটির তলায়।
সে বসে ঠিক সেই আগের ভঙিমায়,
মুখখানি আগের মতো,
তবে সদ্যফোটা সাদা পদ্মের মতো নয়,
কিছুটা মলিন হয়েছে,
বয়সের কিছু ছাপ পড়েছে।
সেই চোখ, সেই চাহনি এখনোও,
দিল গুড়িয়ে দেয়ার মতো হাসি।
চুল এখন আগের মতো কালো মেঘবরণ নয়,
কিছু সাদা মেঘের রঙ ধরেছে।
লাল পাড়ের সাদা শাড়ি ,
আগের মতো আঁচল দিয়ে খোপাটা ঢেকে রেখেছে।
মুখটা এখনোও চিকন-গৌর ।
কেমন আছো ? পুরনো ভঙিতেই জিজ্ঞেস করলো।
চেয়েই রইলাম কিছুক্ষণ। কতদিন পরে সেই কণ্ঠ।
মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলল।
নীরবে পাশে বসতে বসতে বললাম, বুঝতেই পারছো,
কোথায় শূন্যতা, সে তো তুমি জানো।
তুমি চলে যাওয়ার পর আমার সব হারিয়ে গেছে, স-ব।
কিছুই যেন আর ঠিক চলছিল না, কবিতার পাতায় আঁক পড়েনা,
জীবন নৌকোর মাঝি হারিয়ে যাওয়ার মত।
কেন ? তুমি অন্য কাইকে এখনো ...
না না । কাউকে ভাবতে পারিনি তোমার মতো।
যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা অন্যকিছু দিয়ে
কি পূরণ হয়?
মনে হলো তার মুখমন্ডলে বেদনার মেঘ জমা হয়েছে।
হয়তো এখনি ঝরে পড়বে মাটিতে।
কষ্ট হচ্ছে? জিজ্ঞেস করলেম।
চকিত দৃষ্টি মেলে দূর আকাশের দিকে চেয়ে রইলো।
আকাশের শূন্যতা যেন তার কাছে হার মানবে।
উত্তরের অপেক্ষা না করে শুধালাম, সংসার কেমন চলছে?
কিছুক্ষণ মাটির দিকে তাকিয়ে অস্ফুট কন্ঠে বলল, ও নেই।
বিয়ের কিছুদিন পরেই কঠিন রোগে পড়েছিল। তারপর...
মনটা বিষাদে ভরে গেল। বুঝলাম, সেও ভালো নেই।
কিছুক্ষণ সময়টা থমকে গেল।
বুঝে উঠতে পারছিলাম না কীভাব আবার শুরু করব।
কী বলব; কীভাবে তাকে সান্তনা দেবো?
ও কাজটা সহজ করে দিল।
বলল, এখন এখানে একটা স্কুলে পড়াই,
মাঝে মাঝে এখানে আসি। অতীতকে ফিরে পাই।
ওটাই এখন একমাত্র সঙ্গী।
আমি চুপ করে চেয়ে রইলাম তার দিকে।
দূর আকাশে পড়ন্ত বিকেলে মেঘ গলে
পিঙ্গল রোদ তখন উকিঁ দিচ্ছে।