একা আঁকি রক্ততিলক—
একা একেবারে একা, নি:সঙ্গ—
আমার নি:সঙ্গতার আকাশ জুড়ে জাগে ওই তারারা,
কালো অন্ধকারের ঢেউ ওঠে, ঢেউ নামে বটের ঝুরির মতো,
তবু একা আঁকি রক্ততিলক রাতের বুকে মাথা রেখে,
কেউ নেই আর জেগে কোনখানে, নিশ্চুপ পৃথিবীর আদিগন্ত,
সকল সামর্থ্যের চিতা জ্বলে ওই কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে—
মাতা! এই প্রভাতের প্রণাম যে আমার অন্তিম প্রণাম,
আমি বিজয়ী হতে চাই না তোমার আশীর্বাদে—
তোমার আশীর্বাদে—যেন সকল শৌর্যের প্রকাশ দেখে কুরুক্ষেত্র,
যেন বীরের মর্যাদা পাই ত্রুটিহীন—নিষ্ঠার দৃষ্টান্তে।
আমার কোন প্রতিদ্বন্দী নেই, দেখাতে হবে না কোথাও কোনো—
দৃঢ় নগ্ন পেশীর আস্ফালন, দিতে হবে না কোথাও—
সামর্থ্যের তাত্ক্ষনিক পরিচয়।
আমার এ যাত্রা কোনো যুদ্ধের জন্য নয়,
কোথাও কাউকে পরাজিত করার জন্য নয়—
কোনো জয়ের অভিলাষে নয়—
যুদ্ধ জয়ের উল্লাস সে তো ক্ষণিক পাশবিক তৃপ্তির প্রকাশ মাত্র,
মৃত্যু—সে তো সুখ সম্ভোগের যবনিকা মাত্র,
শুধুমাত্র সামর্থ্যের পূর্ণচ্ছেদ।
আমি তো মৃত্যুহীন, আমি শুধু অপ্রকাশিত প্রকাশ,
প্রতি প্রয়োজনে শুধু দৃশ্যমান, আমি অনন্তকাল ধরে একিই,
সুদর্শন হতে জন্ম নিয়ে চলি পথ, ফিরি আবার সুদর্শনে,
ঈশ্বরের অপার লীলায় তোমার গর্ভের অবস্থানেই—
রচিত হয়েছে আমার প্রস্থান ইতিহাস।
তবু পরিয়েছ এই কবচ তাবিচ স্নেহের সম্মোহনে,
চেয়ে দেখো—চেয়ে দেখো মাতা,
একবার চেয়ে দেখো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধভূমির দিকে—
অস্তিত্বহীন, মেরুদণ্ডহীন,প্রতিবিম্বিত লালসার আস্ফালন,
দাঁড়িয়ে রয়েছে আগামীর পথ করে রুদ্ধ,
লজ্জাহীন সপ্তরথীরূপে লেলিহান জিহবায়।  
আমাকে যে যেতে হবে ওই খানে—
চক্রব্যূহের গভীরে!গভীর হতে আরো গভীরে!
প্রণাম মাতা—একবার হাত রাখো মাথার উপর—
শেষ যাত্রার সময় হয়েছে এবার,
আর কিছু পরে পুবের আকাশে ছড়িয়ে পড়বে আগুন আলো—
শঙ্খ নিনাদে কম্পিত হবে কুরুক্ষেত্র—
সমগ্র ভবিষ্যত্‍ আবদ্ধ যে আজ ছলনার নাগপাশে!
অপলক দাঁড়িয়ে রয়েছে বর্তমানের দ্বারে,
বড় অসহায়, একা—খুলে দিতে হবে বাঁধন,
ছিন্ন করে দিতে হবে সকল মোহ,
খাঁচা খুলে উড়িয়ে দিতে হবে সকল পাখি আকাশের পথে,
তারপর সকল ছায়া লীন হবে কুরুক্ষেত্রের লালমাটি শরীরে,
আমাকে—শুধু আমাকেই দিয়ে যেতে হবে স্বাধীনতার ঠিকানা—
উত্তরসূরীদের স্বপ্ন চোখের তারায়—
তাই যেতে হবে ওই খানে, ওই চক্রব্যূহের গভীরে—
আগামীর জন্মের ঠিকানায়।
একা একেবারে একা, শুধু আমি একা অভিমন্যু.....!!!!!