তাই? সব শুনলাম, এখন বলো আমায় কি করতে হবে।
আর আগে কেন এলে না আমার কাছে,লুকিয়েও তো পারতে!
তোমায় মন্ত্র দিতাম কানে, সকাল সন্ধ্যা জপে,পেয়ে যেতে মুক্তি।
কতকাল আগে একবার এসেছিলে বটে; শেষবারের মতো,তখন সামান্য জ্বর ছিল,
আমি ভেবেছিলাম এ আর এমন কি! বোধহয় একটুখানি হেসেওছিলাম!
ও! মনে পড়েছে!তুমি বলেছিলে, আমার জ্বর! আর তুমি হাসছো!
আমি বলেছিলাম, ও না! মুখ ফুটে বলিনি—
মনে মনে বলেছিলাম জ্বর তো সবে শুরু, এখন কতবার হবে!
আবার সারাজীবন নাও সারতে পারে।এ যে সারে না কারোর।  
তুমি খুব অস্থির হয়ে উঠেছিলে, বলেছিলে কিছু একটা করো, আর পারছি না!
আমি চুপ করেছিলাম,ভেবেছিলাম এ অসুখ সয়ে যাবে একদিন,
এমন কি—ওষুধ খেলেও এ যে সারবে না কখনো,আর কি ওষুধেই বা সারে—
এ যে পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম মানব মানবীর শরীরের থেকে সঞ্চারিত,
এ যে জন্ম জন্মান্তর ধরে পূর্বজদের থেকে বয়ে বেড়াতে হয়,
তা সে যাই হোক, এখন বলো কেমন আছো?
তুমি বললে,যেমনি থাকি তোমার আর কি আসে যায় তাতে—
এই কথাটি শুনতে শুনতে কবিতার শেষ লাইনটা লিখতে লিখতে—
তাকালাম যখন অমিতার বা অ-মিতার দিকে,তখন চমকে উঠেছিলাম!
আমার একলা ঘরের ছোট্ট চৌকির উপর, প্রায় অজ্ঞান হয়ে শুয়ে পড়েছিল সে, অস্ফুটে কিছু একটা বলতে চাইছিল, আমি বললাম কি কষ্ট হচ্ছে?
তোমার গা তো জ্বরে পুড়ছে?এমনতর প্রকোপ ঘটলো কী করে?
কি বলছো,জল খাবে?
তারপর সে আমার হাতের বেষ্টনীর মাঝে কিছুটা সামলে নিয়েছে বুঝলাম,
আমার চোখে চোখ রাখার জন্য তার ক্লান্ত চোখের অক্লান্ত চেষ্টা,
এরপরের কথাগুলো সে খুব স্পষ্টভাবে বলেছিল, বলেছিল,না জল চাই না—
শুধু একটি কথা তোমায় বলতে চাই, তুমি কি এমনি করে চিরকাল,
তাত্বিক নৈসর্গবাদি থেকে যাবে—এমন কি আজও!
আজও তুমি আমায় সেই অ-মিতাই করে রেখে দেবে!
শুধু এটুকুই জানতে চাই আজ তোমার কাছে!
এভাবে ও যে,আমায় প্রশ্ন করবে বুঝতে পারিনি তখন,
হয়তো কোনদিনও বোঝার চেষ্টাই করিনি!নির্বাক থেকে তখন শুধু ভেবে চলেছি—
এতকাল পরে ফিরে এসেছে সে শুধু এইটুকুই বলতে,
আর নিরন্তর বিচ্ছিন থেকেও অপেক্ষা করে গেছে সে আমার জন্য,
সকল তত্বগুলো তখন জট পাকিয়ে গিয়ে বড় এলোমেলো করে তুলেছে আমায়,
আর আমি তার সেই ক্লান্ত চোখের আগুন শিখায় অব্যক্ত শব্দগুলো খুঁজছিলাম!
উপেক্ষা আর অপেক্ষার অর্থ বুঝবো বলে।