সেদিন ছিল কালো অন্ধকার ভারী বর্ষার এক রাত
বিষন্ন আকাশ কেঁপে কেঁপে গর্জে উঠছিল ক্রমাগত
বিষাদময় দমকা হাওয়া উড়িয়ে নিচ্ছিল ধুলোবালি
ঝরে পরা গাছের পাতা থেকে শুরু করে সব কিছু।


নির্জন রাস্তায় একাকী দাঁড়িয়ে শীতে কাঁপানো  
নিষ্পাপ আহত পাখীর মত এক অবুঝ প্রেমিক
কেবলই তার বুকফাটা বেদনার কান্নার অশ্রুধারা
গড়িয়ে মিশে যাচ্ছিল অঝরে ঝরা বৃষ্টির জলে।


প্রলয় কিংবা বজ্রপাতে মরে যাবার ভয় ছিল না তার
শীতে নিউমোনিয়া কিংবা জ্বরের ভয় ছিল না একটুও
ঘুর্নিঝড়ে উড়ে আসা ভারী কিছু কিংবা বৃক্ষের ডালে
আহত হবার ভয় ছিল না অবুঝ প্রেমিকের এক বিন্দু।  


ছিল না ছিঁড়েপরা বৈদ্যুতিক তারে মরে যাবার ভয়
ছিল না অস্পষ্ট আলোয় কোন গাড়ী চাপার ভয়।
ছিল শুধু একটি বারের জন্য দু'চোখ ভরে দেখবার
ছিল শুধু ভুল ভাঙ্গানো-ভালোবাসার কথা বলবার।


সে ছিল এক অবুঝ প্রেমিক
ভালোবাসা ছাড়া সে আর কিছুই বুঝেনি সেই রাতে
একটিবার দেখা করতে চেয়েছিল তার অবুঝ হৃদয়
তা'কে না দেখে ফিরবে না, এটাই ছিল তার প্রতিজ্ঞা।


রাত্রি প্রায় শেষ- কমে গিয়েছিল আকাশের গর্জন
বাতাসের হুঙ্কারও যেন অনেকটা নিস্তেজ ছিল প্রায়
ফজরের আযানে পাখী সহ জেগে উঠলো অনেকেই
ধীরে ধীরে শুরু হতে লাগলো স্বাভাবিক জনজীবন।  


তখনোও বৃষ্টির জল জমে ছিল ফুটপাথ ঘেঁষে
ঝরাপাতা লতাগুল্ম ভাঙা ডালপালা ছিল যত্রতত্র
মোড়ের চায়ের দোকানের টিনের চালাও গিয়েছিল উড়ে
মুখ থুবড়ে মরে পরে ছিল সঙ্গীচ্ছিন্ন একটি পায়রা।


পথচারীদের কোলাহলময় ছিল দুই রাস্তার মোড়
ক্রমশ জমে উঠেছিল একে একে পথচারীদের ভীড়
তারপর পুলিশ ভ্যান এম্বুলেন্স সাংবাদিকও হয়তো
দু'পাশের বারান্দা-জানালা থেকে দেখছিল অনেকেই।


জমে থাকা ভীড়ের ঠিক উল্টো দিকের দো'তলা বাড়ী
সেই বাড়ীর প্রায় সকলেই রাস্তার ভীড়ে জল্পনায় মত্ত
শুধু দো'তলার বারান্দায় একাকী দাঁড়িয়ে এক কিশোরী
নির্বাক চেয়ে ছিল কৌতূহলী জনতার ভিড়ের পানে।


সেই সে কিশোরী যার অপেক্ষায় ছিল কেউ সারাটি রাত  
ঘূর্ণিঝড়ের মত তোলপাড় করছিল যার অপরাধী হৃদয়
ঝর্ণার মত ঝরছিল জলধারা তার অভিমানী দু'চোখ বেয়ে
যে চিৎকার করেও বলতে পারেনি, আমায় ক্ষমা করে দিও।


সে ছিল এক অবুঝ প্রেমিক
সারারাত অপেক্ষা করেও ভাঙাতে পারেনি প্রেমিকার অভিমান
পারেনি বোঝাতে তার হৃদয়ের গহীনের লুকানো সমস্ত কথা
মরে যাবার আগে সে হয়তো বলেছিল, আমায় ক্ষমা করে দিও।


টরন্টো
অক্টোবর ৩০, ২০২১