স্বপ্ন দেখা কি অন্যায়?
ভালো থাকার স্বপ্ন, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন?
স্বপ্ন একটি গল্প লেখার, স্বপ্ন একটি সুন্দর কবিতা লেখার।
এই স্বপ্নকে ঘিরেই স্বপ্নের মত বেঁচে থাকা।


স্বপ্ন আমার অনেক –
বয়সের সাথে সাথে স্বপ্নেরও পরিবর্তন হয়,
তবে স্বপ্ন স্বপ্নই।


খুব ছোট বেলায় স্বপ্ন ছিল বড় হবার-
মায়ের শাসন, বাবার আদেশ, স্কুলের নিয়মের
বেড়াজাল থেকে বাঁচতে বড় হবার স্বপ্ন।
সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বহু বছর আগে, সাথে যুক্ত হয়েছে স্বপ্নমালা।
ভালো লাগার স্বপ্ন, ভালোবাসার স্বপ্ন।
স্বপ্ন তখন জোনাকির মত জ্বলে আর নিভে।
আকাশের  তাঁরা দেখে মনে হতো – ঐ দূর আকাশের তাঁরা হবার স্বপ্ন,
পাখির মত ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াবার স্বপ্ন।


একদিন মাঝ রাতে দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙ্গে যায়,
সমস্ত শরীর ভিজে একাকার।
ভাবলাম, স্বপ্ন দেখতে চাই না (দুঃস্বপ্ন)
ভোরের আলো চোখে পরতেই মনের জানালায় নাড়া দিলো নতুন স্বপ্ন।
জানালা দিয়ে দেখি, এক ঝাঁক চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মেতে উঠেছে।
এমন কলরবে ঘুম আসে কার?
পাখির মত মুক্ত বিহঙ্গে উড়ে বেড়াতে কার না সাধ হয়?
আমার’তো একটু বেশীই।
ঐ যে বলেছিলাম, স্কুলের নিয়মের বেড়াজাল।
এক সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি বৃষ্টি, অঝোরে বৃষ্টি।
স্কুলে যাবার তো প্রশ্নই আসে না।
বৃষ্টির শব্দ যেন জল তরঙ্গের মত টুং টাং বাজতে লাগলো।
কতক্ষণ যে বাহির পানে তাকিয়েছিলাম জানি না।
স্বপ্ন অবশ্যই ছিল।
হয়তো বৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে সমস্ত শরীর মন ভেজাতে।
নয়তো খোলা মাঠে ছুটে যেতে,
সাথীদের নিয়ে খেলায় ভুলে যেতে সমস্ত শাসন, নিয়মের বেড়াজাল।
হয়তো অন্যকিছু যা আমার ভাবুক মনে ভেবেছিলো নিজেও জানিনি।


টুকটাক ছবি আকার হাত ছিল।
স্বপ্ন ছিল ছবি আকার।
খুব বড় মাপের চিত্রশিল্পী হবার স্বপ্ন ছিল না।
তবে মনের মত একটা ছবি আকার স্বপ্ন ছিল।


বাঁশী বাজাতাম,
নিজের মনের জন্য আপন সুরে সুর মেলাতে ভালো লাগতো।
বাঁশীর সুরে আপনজন’কে কাছে ডাকতে স্বপ্ন দেখতাম।
এমন মধুর বাঁশরী সুরে যেন পাগল হয়ে যায় প্রিয়ার উত্তাল মন।


স্বপ্ন ছিল গল্প, কবিতার, কবি হবার।
আমার নির্বাক দৃষ্টির অবচেতন মনের কথোপকথন ডায়েরীর পাতায় লিখে রাখতে।
ছন্দে কথায় আবেগে সমস্ত মন জুড়ে থাকতো ছোট্ট একটা কবি হবার স্বপ্ন।
আমি খুব সাহসী হয়তো নই, হয়ত বলছি কেনো? আমি আসলেও সাহসী নই।
মনের বিরুদ্ধে  পরাজিত হয়েছি সামাজিক প্রয়োজন আর শাসনের কাছে।
আমার একটি একটি স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে মাথা নত করেছি নিয়তির কাছে।
স্বপ্ন, আমার স্বপ্ন– বড় হবার স্বপ্ন,
একটি কবিতার স্বপ্ন, একটি কবি হবার স্বপ্ন।


মনের মধ্যে স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাবার, দূর থেকে বহু দূর দেশ।
নতুন দেশ দেখার স্বপ্ন, ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বপ্ন।
সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বটে, সাথে কেড়ে নিয়েছে হাজারো স্বপ্ন।
দেশের মাটির গন্ধ, মায়ের শাসন, ভাইয়ের ভালোবাসা,
বন্ধুদের আড্ডা, পাখিদের কলরব, জোয়ারের পানিতে ইচ্ছে মত সাঁতার কাটা,
শীতের সকালে কাচা ছোলা আর লেবু লবণ দিয়ে মাঠার স্বাদ,
সবই হারিয়েছি একটি স্বপ্নের আশায়।
স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো।
স্বপ্নের স্বাদ পেতে লেগে গেলো বহু বছর।
ত’তদিনে মনের সেই ভাবনা গুলো বিলুপ্ত প্রায় জীবিকার অন্বেষণে।


স্বপ্ন দেখেছিলাম সুন্দর একটি সকালের।
সারাদিনের নীল আকাশের স্বপ্ন,
রাতের তাঁরা ভরা আকাশের স্বপ্ন।
স্বপ্নে বেধেছিলাম আশার আলো,
হৃদয় খাঁচায় বন্দি করেছিলাম হাজারো সবুজ টিয়া।
স্বপ্ন দেখেছিলাম সবার কাছে পৌঁছে দিবো–
আমার অবচেতন মনের কথাগুলো  
কবিতায় ছন্দে আবেগের প্রতিটা শব্দ নিয়ে যাবো সবার কাছে।


স্বপ্নটা এমনই ছিল
থাকবে আমার কবিতা, আমার কথা,
ভাবনাগুলো থাকবে ছন্দে, অভিমানে আর উল্লাসে।
এমনই একটি স্বপ্ন দেখেছিলাম।


যেতে হবে বহুদূর, প্রায় ছুঁই ছুঁই।
এই বুঝি আমার স্বপ্নের ডিঙ্গায় চড়ে নিয়ে যাবো আমার স্বপ্ন-ঝুড়ি।
আর একটু সময় বাকী,
এই বুঝি ডিঙ্গা ভিড়লো ঘাটে।
স্বপ্ন আমার বহুদিনের, এইতো আর একটু বাকী।
বাতাসে দুলছে ছোট্ট স্বপ্ন ডিঙ্গা, সাথে স্বপ্নঝুড়ি।
হঠাৎ চিৎকার শুনি ওপার থেকে।
আর্তনাদে সমস্ত আকাশে যেন ঘনঘটা মেঘের গর্জনে।
এই বুঝি নেমে এলো কালবোশেখি ঝড়।
ঝড়ো হাওয়া যেন পূর্ব থেকে পশ্চিমে আর উত্তর থেকে দক্ষিণে।
ফেলে দিয়ে স্বপ্ন-ঝুড়ি ওপারে ফিরি তড়িঘড়ি।
আকাশে গর্জন, বৃষ্টির ছিটা গা’য়ে মুখে আছড়ে পরছে।
স্বপ্ন-ঝুড়ি উত্তাল ঢেউয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন ভেসে যায়,
অঝোরে নেমে আসে বৃষ্টি।
সমস্ত শরীর ভিজে যায় অগণিত বৃষ্টির ফোটায়।
চোখের জল আর বৃষ্টির জল মিশে একাকার।


স্বপ্ন দেখা...।।
আমার স্বপ্ন– স্বপ্নই থেকে গেলো।
কালবোশেখি ঝড়ে মৃত পাখির পালকের মত ঘূর্ণিপাকে আমার বিচ্ছিন্ন স্বপ্নগুলো।
অবশেষে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
স্বপ্ন দেখা কি অন্যায়?
ভালো থাকার স্বপ্ন?
ভালো লাগার স্বপ্ন?
ভালোবাসার স্বপ্ন?
সুন্দর একটি গল্প-কবিতার-গানের স্বপ্ন?
বাঁশীতে সুর তুলে প্রিয়ার চোখে আবেগের উচ্ছ্বাসের স্বপ্ন?
স্বপ্ন ছাড়া কি বাঁচা যায়?
স্বপ্ন দেখি বলেই বুক ভরে নি’ই নিঃশ্বাস।
নতুন করে বাঁচবার বিশ্বাস।
আবার দেখি স্বপ্ন–
নতুন করে বাঁচবার স্বপ্ন।