সর্ষেফুলের হাইকু।


০১।
সর্ষেফুলের হলুদ চোখে চেয়ে দেখি স্নিগ্ধ এক দেবদুত বসি আছে।
হাতে নিয়ে আছে দুনিয়ার যত হলুদ রঙা ঘুড়ি।
আমাদের দ্যাখার কথা নয়, তার ওড়া উড়ি!


২.
সর্ষেফুলের শুক্রসকালের আশায় আশায় হপ্তা কাটে।
কেউ কিছু ভাবছে না, সর্ষেদেবীর নাম লিখেছি মলাটে।


০৩.
সর্ষেফুলেরে শত্রু ভাবে জুঁই।
সর্ষে বলে, আজ তো তবে যুদ্ধের দিন।
আরেকটু শুই।


০৪.
সর্ষেফুল,
তোমার আমার বয়সে দারুন অমিল।
আমি শুধু তোমায় লিখি, চিবুকের ডান তিল।


০৫.
সর্ষেফুল ছড়িয়েছে একটি হলদেটে কান্না।
মানুষের দ্যাখার কথা নয়,
সর্ষেমাঠে বিশ্বস্ত আসা যাওয়া আর ঈষৎ অদ্ভুত ভয়।


০৬.
স্বর্গ হতে এতদুর বসি এলাম সর্ষের কোলঘেষে,
যেনো পাশে বসি আছে মৃত্যুর মতন সুখ।
সাতজন যুবক ভিখারি হাত পেতে আছে একরত্তি হলুদের জন্যি।


০৭.
সর্ষেক্ষেতের দৃশ্য অদৃশ্য পেরিয়ে গ্যালে ভাসানের নদীঘাট।
বুকের ভিতরের বাউল মনোহরার খোলা জানালায় চেয়ে থাকে,
হলুদে শুয়ে রই,
ভাসানের নদীঘাট হতে নিজেকে নেই ঢাকি।


০৮.
হলুদের শুন্য কোলে
আলো জ্বালবো বলে,
উপোস করিনি বামুনের মতন,
সর্ষেক্ষেতে গলা ডুবিয়ে বলেছি, শোন কথা আছে।


০৯.
ছুয়ে যায়নি কতকাল এই খোলা হলুদ ক্ষেত!
ছুয়নি পরস্পর।
লাল মদ বেগচঞ্চল অশ্বের মতন দৌড়ে যায় হলুদ হইতে মগজে, অনায়স ভঙ্গিতে, বিরহে।


১০.
এইখানে হাওয়া আছে সবসময়।
রাস্তা হয়েছে হলুদ চিরে,
কিছু মরা পাখি গভীর দুই চোখ নিয়ে চেয়ে আছে।


১১.
সর্ষেফুল, সর্ষেফুল।
সুখ নিরবধি।
অথচ ডেকি ওঠে হৃদয়ে এক গভীর কাতর স্বর।


১২.
সর্ষেফুল,
পবিত্র হলুদ।
ধুয়ে দিল কন্ঠনালী।
এখন, রাজার মুখে মুখে কথা কই।


১৩.
জ্বলতি থাকে থিরথিরিয়ে
অন্ধকারের হাওয়াতে,
শুয়ে রই নগ্ন পরিচ্ছন্ন।


১৪.
নদীর ওপারে ধর্মযুদ্ধ!
এপারে পাখির কান্না।
মাঝখানে নদী, কোলেতে সর্ষেক্ষেত আর ঈশ্বর।


১৫.
ধার্মিক শিষ্যগোষ্ঠী এখানে এসেছিলেন,
ঠোঁট বাঁকিয়ে চলি গ্যালে, ঈশ্বর নির্বিঘ্নতায় চুমু খেলেন পবিত্র হলুদে।
সর্ষেক্ষেতে।


১৬.
সোনালি শরৎ আসে কিছুকালের লাগি,
রাত্রির কোমল হলুদ শস্যস্তবকে আমরা থাকি, বহুকালের লাগি।


০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭