সেদিন সদরে বেলা দ্বিপ্রহরে কে এক ললিত যুবা;
  ক্লান্ত-মলিন, তীব্র-দাহন, শ্রান্তি দরুণ তপ্ত মুখর প্রভা।
  প্রাণপন ভয়, সদরে লুটায়,' মাগো এই সামগ্রী বহা-
প্রয়োজন খুব, ঘরেতে অসুখ, মুষ্টি অন্ন, চিকিত্সা সুরাহা।
  ঘুরে পথপরে সারা বেলা ধরে বেঁচে থাকা আয়োজন
   দিনান্তে জোটে শাক পাতা মোটে সামান্য প্রয়োজন'।
  হেরি রূপ তার ঘরে খোকা মোর মায়াময় প্রতিচ্ছবি
     অবিকল গড়া যেন মনকাড়া বিধাতার কারচুপি।
কেঁদে কহে,' মাগো আর কহিনাকো পড়ালেখা দিনান্তে-
  ছেড়ে দিল পথে নাম আছে খাতে সরকারী নমুনাতে।
দেখেছি কতই বিদ্রোহ কাল্,একাত্তরের রেশ,পথকে আপন-
নিয়েছি জীবন, মরণের কাছে শেষ,বিপ্লবী বাবা জীবনের ঋণ,
  সঁপেছি নিজের বিবেক অধীন, হারায়েছি য্ত স্বপ্ন রঙীণ,
     মুছেছি শ্রান্তি কালের ভ্রান্তি আমি দীন অতি হীন।
   এসেছি দুয়ারে ভিখ্ মাগিবারে এ বেলা ছেলের ঋণ'
দুই হাত পাতে,' ফিরাসনে মাগো সন্তান তব ঘোর দুর্দিণ'।


  ডাকি ওরে হেঁকে,' শুনতো হে কোথা হতে এলি হেথা?  
    পথে পথে ঘুরি এত রুপ হেরি যেন বিধাতার দেখা'।
খোকা বলে হেসে,' মাগো তুমি কিসে বুঝিবে এমন ব্যাথা
    রাজালয় হতে অনাবাসী হয়ে হয়েছি ভিখারী হেথা'।


     কত হেরি হেথা মন্দির যথা,মসজিদ্ ধরাধামে!
  দেখি নাই ফিরে কাছের শিশুরে কখনো যথার্থ দামে।
     পূজাঘরে ঐ দেবতা বসিছে ভোগাড়তি আড়ম্বর;
     পথের দেবতা লুটায় মলিন নাহি কেহ পূজিবার।


   কহিলাম খোকা,' সামন্য অতি দীন আমি একজন,
    সাধ্য কোথা পূজিবারে তোরে এলি দ্বারে এক্ষণ ?
    নিলাম যা ছিল পণ্য যতেক দিলেম মূল্য তায়;
    এতদিনে তবে পূজিবারে ভবে হল আসল সময়'।