না,তোমায় দুঃখ দেবার কোন অভিলাষ নেই আমার।


তবে বুঝতে শিখেছি যেদিন--মায়ের একটা গোটা জীবনের মাশুল-
বাবা ঠেলে দিয়ে গেছে আঁধারে-দীর্ঘ বছর ধরে রক্তক্ষয়ী মা,
তিলে তিলে শেষ হওয়া টুকরো হৃদয় নিয়েও-
গড়ে দিত স্নেহের ঘর,ঢেকে রাখত সুরক্ষিত আঁচল-
আমি সেদিন বড় হলাম খুব-মায়ের করুণ মুখ চেয়ে,
রাতের প্রহর ঠেলে বাবার বাড়ী ফেরা,তীব্র আসক্তি-
নারী সঙ্গ,জুয়া,মদ--আর প্রতি দিন মায়ের লাঞ্ছণা,গঞ্জণা।
তুমি জানো না,আমি মনে মনে অনেক প্রতিজ্ঞা করেছি সেদিন-


একটু একটু করে ধ্বংস হয়ে যাওয়া আমাদের ঘর-----
ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাবার মূল্যবোধ।
আমাদের একত্রের সব সুখী ছবিগুলো ক্রমশঃ ধূসর----
অদৃশ্য, ভয়ংকর বাস্তব শূণ্যতা যখন ছেয়ে ফেলত ঘরটাকে-----
আমি খুঁজতাম এ্যালবাম থেকে বিগত টুকরোগুলো-
অথচ দেখতাম মা কি নিদারুণ স্তব্ধতা নিয়ে খড়কুটোগুলো-
জোড়াতালি দিতে দিতে কখন যেন বাকরুদ্ধই হয়ে গেল।


অথচ বিশ্বাস করো,বর্ষা পেরিয়ে রোদ ঝিলমিল-
চিকন সকালে বাবা আহ্লাদিত হয়ে মাকে,আমাকে ডেকে দেখাত-
জিনিয়া,সূর্যমুখী,ক্যালেনডুলার সদ্য পাপড়ি মেলা টব-
আর মা উচ্ছসিত হয়ে ক্যামেরায় ধরে রাখতো সেই ছবি-
সেই ছবিটা জানো,সেই ছবিটাই বাবা পরে দেখতেও চাইতো না।


অনেকভাবে বুঝতে চাইতাম কিন্তু কোনদিন পারিনি-
সেদিন আমি প্রকৃতই অনেক বড় হয়ে গিয়েছি মনে-
আর প্রতিজ্ঞাও করেছি--হয়তো তুমি বলবে নিষ্ঠুর
যখন দেখি তোমার সস্নেহ মুখটা পাল্টে যায় হঠাত্
জেগে ওঠে বাবা মুখ---মায়ের দীর্ঘশ্বাস,আর একরাশ দুঃস্বপ্ন-
আবার আমি হয়ে যাই অভিজ্ঞতায় আকাশ সমান।
তুমি তাকে দুঃখ ভাবো--আসলে এ আমার নিজেকে স্বান্তনা।