এটাই বরং জীবনের প্রকৃত রঙ,
                    বাস্তবতার আয়োজন ভিন্ন।
সমস্ত হিসেব কষে চলে মানুষ,
                    তবুও যোজন দূরত্বে স্বপ্ন।
আজকে দেখো; ক্লাশের সবচে' মেধাবী-
ছাত্রীটাই পেরুতে পারেনি ইস্কুলের গণ্ডি।
যে হয়েছে অধ্যক্ষ, নামকরা কলেজের,
সেতো সীমাহীন উদাসীন, উড়নচণ্ডী।
গণিতে নিখুঁত পক্ব ছেলেটা-ই করেছে-
জীবনের সহজ অংকে বড়োসড়ো ভুল,
হিসাব বিজ্ঞানে প্রথম ছেলেটাও জীবনের হিসেবে-
গরমিলে করে চিৎকার শোরগোল।
রসায়নে ডিগ্রিপ্রাপ্ত মেয়েটিও আজ-
প্রেমের রসায়নে হয়েছে চরম ব্যর্থ,
পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক করা ছেলেটাই-
আজ সমাজে অচল, বড় অপদার্থ।
সমাজনীতির বড় পণ্ডিত যে, সেই
আজ খাচ্ছে সমাজ ডাল-রুটি করে,
রাজনীতি নিয়ে পড়া ছেলেটিই বড্ড
অপরাজনীতির স্বীকার, দেশান্তরে।
ব্যবসায় শিক্ষার সবচেয়ে উদ্যমী ছাত্রটাই
আজ চাকুরী বাজারে দাসের ভূমিকায়,
রাস্তা রাস্তায় ঘুরা বেকার ছেলেটাও
পেরিয়েছিলো অর্থনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকৌশল বিভাগের মেধাবী ছাত্রীটা আজ
প্রেমিকের অপকৌশলে দিয়েছে আত্মত্যাগ,
সাহিত্যের অগোছালো ছেলেটাই দেখি
বেশ গুছিয়ে নিয়েছে যতো প্রাপ্তির ব্যাগ।
চারুকলায় বড় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাত্রীটাই
নাকি আজ ভেঙেছে জীবনের রং তুলি,
আইনের ছাত্র হয়েও আটাশ মাসের জেল-
খেটে মজিদ ভুলেছে শহরের অলিগলি।
চৌরাস্তার মোড়ে বসে নারী উত্যক্তকারী
বখাটেটারই শেষে হয়েছে সুখের সংসার,
মাদকসহ জেল খাটা ছেলেটাই আজ
প্রধান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রক অফিসার।
ধর্ম শিক্ষায় দেশসেরা হয়েও তো অধর্মের
কাজে রাতদিন বুঁদ হয়ে ডুবে আছে কেউ,
ইতিহাসে সেরা ছাত্রটা আজ চাচার নোংরা
চালে ইতিহাস হয়ে গেলো, অশ্রু ঢেউ।
সংগীতের রাণী খ্যাত বিশিখাই আজ কষ্টে
পিষ্ট জীবন নিয়ে ভুলে গেছে সেই সুর লয়,
প্রযুক্তিবিদ হয়ে প্রতিষ্ঠিত তাপসীও দেখি-
মাতাল স্বামীর কুযুক্তির ভুক্তভোগী, অশান্ত গৃহালয়।
সাংবাদিকতায় পাশ পারুল স্বামী শ্বশুরবাড়ি
অত্যাচারে হয়েছে নিজেই প্রধান সংবাদ,
উচ্ছৃঙ্খল বদমাশ কুখ্যাত অপবাদের মতিন
গ্রাম্য সালিশে দক্ষতায় মিটায় যতো বাদ-বিবাদ।
প্রথম হতে দশম রোল এক, অপ্রতিরোধ্য
মেধাবী হয়েও কেউ আজ অভাবে রিকসা টানে,
পরিসংখ্যানে প্রথম শ্রেণীসহ স্নাতকোত্তর,
তবুও বেকার, রাস্তায় ঘুরে চাকরির সন্ধানে।
ভূগোলের সেই সুগোল গাল গালিবাও আজ
আটাশ মাস হয় নিখোঁজ, মধ্য দুপুরে গুম।
স্বামী সন্তান দিশেহারা পরিবারের হাহাকারে
আকাশ বাতাস বড্ড ভারি, উধাও হয়েছে ঘুম।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের সেই মুসলেম কুড়িয়েছিলো
সগৌরবে চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্রের জ্ঞানে খ্যাতি,
জ্ঞানী গুণী বন্ধুটি আজ আগ্নিকাণ্ডে হারিয়ে
ফেলেছে তার দু'চোখের আলোক জ্যোতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বপ্রেমিক খ্যাত ছেলেটাই
মৃত স্ত্রীর শোকে কাটিয়েছে এগারো বছর,
বিশ্বস্ত প্রমিকার ভূমিকায় থাকা মেয়েটিরই
দেখি পরকীয়ার জেরে ভাঙছে স্বামীর ঘর।
চুড়ি বদলানোর মতো সঙ্গী বদলানো তনুও
ভীষণ বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়েছে মাত্র একজনের,
উশৃঙ্খল ও খোলামেলা স্বভাবের সাবেকা-ও
পর্দানশীন শান্ত ঘরণী এক মৌলভীর ঘরের।
বান্ধবীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে কলেজ
ছাড়া ছাত্রটাই মহিলা কলেজের দক্ষ অধ্যক্ষ,
চিকিৎসাশাস্ত্রে সুদক্ষ সুনয়নারই বাস্তববাদী
প্রেমিকের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত, দগ্ধ বক্ষ।
জ্যামিতি ত্রিকোণমিতি সবচেয়ে ভালো বুঝা-
ছেলেটিই আজ সদর এলাকায় কাঠমিস্ত্রি,
সবচেয়ে সুন্দরী সুশ্রী সুদর্শনা মেয়েটিই-
কোন বয়স্ক প্রবাসীর স্বীকৃতিহীন দ্বিতীয় স্ত্রী।
বইপোঁকা বন্ধু সজিবেরই নেই কোনো-
বইয়ের খোঁজ, ব্যস্ত সবজির দোকানদারী,
বারেবারে ফেল করা মৃদুল সরকারই আজ
সুনাম কুড়ায় করে সরকারি বড় চাকরি।
মটর সাইকেলে দাপিয়ে বেড়ানো সুঠামদেহী
মুৎসুদ্দি-ও হুইল চেয়ারে গৃহবন্দি বছর ধরে,
মন্ত্রীর ছেলেটা পড়তো, ক্ষমতার দাপট খুব,
ভারসাম্যহীন আছে পাগলাগারদে পুরে।
তিন মাইল হেঁটে ঘামের দুর্গন্ধসহ পড়তে
আসা আফতাব'র দামী গাড়ি বাড়ি আজ,
নেকাবে গোটা মুখ ঢাকা স্বপ্নাও হাফহাতা
ব্লাউজে সংগীত সন্ধ্যায়, ছাড়িয়েছে লাজ।
তেরোটা বছর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থেকেও শামীম
অবশেষে বাপের পছন্দে করে নিলো বিয়ে,
যে মেয়েটি অপেক্ষার গিরিপথ ধরে হেটে
হলো বুড়ি, তার ক্ষতি পোষাবে কী দিয়ে!
আমেরিকা প্রবাসীর প্রেমের ফাঁদে পড়ে-
ঐ-যে আমাদের তনু ছেড়েছিলো ঘরবাড়ী,
কালকে শুনলাম সেই নাকি হত্যা হয়েছে
যৌতুকের দাবি, জ্যান্ত পুড়ে দিয়েছে গাঢ়ি।
মৃত্যুপথযাত্রী শিক্ষকের পিঠে লাথি মারা
মুনির-ই উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক,
নিয়ম করে নিয়ম ভাঙা সেই তাজুলই দেখি-
আদালতের হাকিম, আইনের সে রক্ষক।
সমস্ত অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদে যেজন খুব-
গর্জে উঠতো, কারণ ছিলো তৃপ্তির হাসির,
সে-ও দেখি সেদিন সম্পত্তির ভাগাভাগির
দ্বন্দ্বে ভাইয়ের খুনে দণ্ড পেয়েছে ফাঁসির।
কাঠ পেন্সিলের আঁচড়ে মুখাবয়ব ফুটানো
প্রতিভাবান ছেলেটা কাঠ মিস্ত্রীর সহকারি,
রাজার হালতে চলা সেই ছেলেটিই হয়েছে
রাজমিস্ত্রীদের সংগঠনের বড়ো পদধারী।
আড্ডা গল্প গান কবিতায় আসর মাতিয়ে
যে সারাতো বন্ধুদের যতো মনের অসুখ,
সড়ক দুর্ঘটনায় নির্মম প্রাণ গেলে সেই
সবিতার কেউ তো জানালোও না শোক!
খেলাধুলার মূল আকর্ষণ সুপ্রিয় যে ছেলেটি-
বিজয় কেতন উড়িয়ে কাঁপাতো সারা মাঠ,
দশটা বছর পঙ্গুত্ব বরণে মরে মরে বেঁচে-
আছে, তার জগৎ বলতেই ছোট একটা খাট।
ভর্তির কিছু টাকার অভাবে বারবার বছর
খুঁয়ে দেয়া ছেলেটা মস্ত পরমাণু বিজ্ঞানী,
আল্লাহ খোদায় প্রচণ্ড অবিশ্বাসী নাস্তিকটাও
আজ সুফিবাদী ধর্মগুরু, খোদার সন্ধানী।
ক্যাম্পাসে যে ছেলেটা খুব ধার্মিক নামাজি
ধর্ম-কর্মের বড্ড দাওয়াত দিতো ঘুরেঘুরে,
সে-ও দেখি নির্দ্বিধায় খুলে বসেছে এক-
জমজমাট সুদের ডীলার তিন রাস্তার মোড়ে।
'বোম মারলেও কথা বের হয় না'- হাসান,
জনসভায় আজ তার কোটি কোটি শ্রোতা,
সবচেয়ে খটো কালো অবহেলিত আণিকা-
ক্যান্সারের নিরাময় আবিষ্কারে পেয়েছে
অনন্য সম্মান, ঔজ্জ্বল্য ও উচ্চতা।
এটাই বরং জীবনের প্রকৃত রঙ,
                   বাস্তবতার আয়োজন ভিন্ন।
সমস্ত হিসেব কষে চলে মানুষ,
                    তবুও যোজন দূরত্বে স্বপ্ন।