আমি রাধুনির ভাঙ্গা ঘড়া,ভাঙ্গা মনের পাড়,
রেলের নিচে চাপা পড়া কুলির ভাঙ্গা হাড়।
অহং ভাগারের পাশে পড়ে থাকা টোকাইর গায়ের বস্ত্র,
রোদ্র তাপে পুড়ে মরা চাষির ফসল কাটার অস্ত্র।
রক্ত খায় মোর রক্তচোষায়
হাড়গুলো তাই ভাসে,
ঠান্ডা আমার লেগেই থাকে
মুখ ভরে রয় কাশে।
অন্ন আমার ছিন্ন পঁচা বাসি ভাত দুই চারি,
বস্ত্র জ্বালা মেটাই আমি হোগলা পাতা জড়ি।
আমি নদীর বুকে ভেসে আসা পদ্মাপাড়ের জেলে,
আমি অগ্নি ঘিরে বসে থাকা কামার সাবের ছেলে।
আমি মাটির কুমোর মাটির মানুষ
মাটিতে পাতি বিছানা,
খোলা আকাশ ছাউনি আমার
বৃষ্টি মোর কান্না।
রাত্রি কাটাই ফুটপাতে তবু
চোখের পানি ঝরে না,
যেমন তেমন দিন কেটে যায়
ব্যাথার কাঁটা সরে না।
অহং কাঠ কাটা সেই নখ কাটা বেহায়া কাঠুরে,
বালু টানা শ্রমিক আমি বোধে বেচে আছি মরে।
আমি সন্ত্র মন্ত্র তন্ত্রবাদী নই,আমি নির্দোষী খুনি,
আমি কুমারীর চাঁদির তেল নই আমি কুলুর ঘানি।
অহং তলা ফুটানি থলে হাতে ঘোরা নিঃস্ব ভিখারী,
আমি হররোজ প্রাতে হেটে গিয়ে পাটকলে কাজ করি।
অহং মরহুম বাবার বাকহীন মেয়ের পদহীন স্বামী,
সেই অান্ধা মায়ের বন্ধ্যা বউয়ের বাকানো হাতছানি।
আমি বাকপটু সেই ঠসা মেয়ের ছায়া,
আমি উঠানে গড়ানো অবুঝ শিশুর মায়া।
আমি বিদেশে গিয়ে ভাষাহীন সেই নিভাষী,
আমি রুটি চুরির দায়ে ঝুলানো মঞ্চে
নিতে যাচ্ছি আজ ফাঁসি।
আমার উপর দিয়ে চলে যায় বাস,
আমি সড়ক দূর্ঘটনায় পড়ে থাকা লাশ।
আমি ক্ষমতার চাপে পিষ্ট,
আমাকে দেখতে আজ হাজার মানুষ হয়েছে সমাবিষ্ট।
আমি আমারি লাশ কাধে ধেয়ে চলা চার জনার চিৎকার,
আমি আমার শোকে আমার কাছে ফিরে আসি বারবার।
আমি যৌতুকে আক্রান্ত নববধুর নতুন কোলে ঘেষা,
আমি মতামতহীন বালিকার বিয়ে অস্বীকারের ভাষা।
আমি শাশুড়ির শিল পেটানো অঙ্কলক্ষী,
আমি লাখপতির মেয়ের ঘৃনিত রক্ষী।
আমি বাবার কাছে অবহেলে থাকি,
পদে পদে খাই মার,গুতা,লাথি।
জনির হাতের খাবারেও হই বঞ্চনার শিকার,
সুখের কাজল আমানিশা এই অধিত্মার।
আমাকে ধুলে তোমরা জোর করে যাও ভেতরে,
আমি সেই পাটক,পিঠ ঢাকা রক্তের চাদরে।
আমি মাদকাসক্ত জুয়াড়ি ছেলের মা,
আমি পরকিয়ার তোরে খুন হওয়া কন্যা।
আমি অনিয়মের নিয়মিত ধস্তাধস্তি দেখে কাঁদি,
আমি তার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে খুন হয়ে যাওয়া বাদী।
আমি ধর্ষিত হওয়া হাজারো মেয়ের চিৎকার,
আমি ও আমরা মোদের বন্ধুর
গুম হওয়ার চাই সৎকার।
সৎকার চেয়ে জীবন হারোনোকে
বারে বারে দেই ধিক্কার।
তবু,আমি ক্ষমতার অপধারীর
হাতে গোলা সরবত,
আধার রাতে শিক্ষক হত্যার
করে যারা কসরত।
অহং লঞ্চডুবির বেশুমার জনতা,
সন্তান হারা মায়ের বুকের ব্যাথা।
আমি কৃষ্ণাঙ্গ কুমারীর নাকের ডগায় জমা হওয়া ঘামের বিন্দু,
আমি গিরি,মরু,মহাকাশ,সর্গ,নরক,সিন্ধু।
আমি প্রাণভোমরার একাকিত্বের গান,
আমি তরুন-তরুনীর ব্যর্থ ভালবাসার টান।
আমি গরু চরানোর রাখালী,
আমার সর্বাঙ্গে আজ বালি।
আমি চিরদিন থাকি বিরহী,
মাথায় ঘাসের বোঝা নিই বহি।
আমি অরাজকতার বাদী-বিবাদীদের খেলার জ্বালা,
আমি ধু ধু মরুর প্রান্তর,নিশীথগামী ভোরবেলা।
আমি নদীর পাড়ে জেগে থাকি সারা রাত্রি,
আমি দাড়িয়ে থেকে হয়রান স্টাচু অব লিবার্টি।
শীতে থরথর কম্পমান নির্যাতিত হিমালয়,
আমি মহাসাগরে বিদীর্ণ ডলফিনের আলয়।
আমি পরাজিত বীর আলীনগরের সন্ধির,
আমি কানপোড়া চিৎকার নির্দোষী বন্দীর।
কিন্তু,একি দূর্ভাগ্য আমার;
আকাশে রক্ত ঝরে আজ
আমি কাদি বারবার,
আমি ছাড়া এই মহাপৃথিবীতে
শোনে না কেউ এই চিৎকার।
ধনী,তোমার বক্ষ জুরায় কক্ষ পাখে
আমি পুড়ি রোদে,
হায়,তোমার ঘরেতে অন্ন পঁচে
আমি মরি ক্ষিদে।
আমার চক্ষু দিয়ে জ্বালাও বাতি,রক্ত দিয়ে স্নান,
বুক খুড়ে মোর অগ্নি জ্বালাও,অন্ন যোগায় প্রাণ।
বস্ত্র আমার গায়ের লোম তোর,অস্ত্র আমার দাত,
শিক্ষা আমার হৃদয় ভবন যদি,আমি নির্যাতিত জাত।
আমি সত্যি সত্যকার,তবুও
বলো,আর কী আছে আমার
আমার ঘাড়ের উপর মাথা দিয়ে সহাও রাজভবনের ভার।
যে ছাতা আজ তোমার মাথায় সে ছাতা মোর হাড়,
এই পৃথিবীটা বয়ে চলেছি আমি
তবুও এই পৃথিবীতে নেই আমার অধিকার।