কবি ও জনতা
মানিক বৈরাগী


পাড়া-মহল্লায় ভাবনার অন্ত নেই, চরম আকালে শহুরে বৃষ্টির হলো বোলে।ভরা মৌসুমে বৃষ্টি বিড়ম্বনায় ব্যবসায় মন্দা।মজুদ করে রাখা পণ্য বিক্রি হচ্ছেনা চড়ামূল্যে। দুশ্চিন্তা গ্রস্থ চেম্বার নেতারা শরণাপন্ন হলো বায়ু বিজ্ঞানীর কাছে। এমন ব্যবসা বিরোধী বৃষ্টি ঝড়ো হাওয়ার আর ক'দিন থাকবে সমাধান সুত্র জেনে নিতে।কেউ কেউ গেলো জ্যোতিষ বাবুর চেম্বারে।


লাল দীঘি ময়দান ফাকা, মিছিল মিটিং জনসভা না থাকায় মাটি, ঘাস,বেওয়ারিশ গুল্ম,অশত্থের শ্বাসমূল রেহায় পেলো নেতাদের পরস্পর আক্রমণাত্মক মিছা বক্তৃতা থেকে।পাল বাবুর মিষ্টির দোকানে বসে বসে গালগপ্পো করে চেয়ার দখলে রাখা ছাড়া কোন কাজ নেই তাদের। চতুর এক নেতা গেলো পরিবেশ ও প্রকৃতি বিজ্ঞানীর কাছে।বিজ্ঞানী তো চিনেনা কে নেতা কে ছাত্র।ওখানেও বেধে গেলো ঝামেলা।


পাড়ায় পাড়ায় আল্লাহ রাসুল সুন্নী ওহাবী মওদুদি  ওয়াজ ব্যবসায়ি মৌলবিদের ব্যবসা মন্দ।
ধর্মজীবীরা শরনাপন্ন হলো পীর মুর্শিদের কাছে,হুজুর যেনো মিকাইল ফেরেস্তার কাছে দরখাস্ত করে।
প্যান প্যানে বৃষ্টিতে শীতের কামড়ে সাজুগুজু তরুণীরা ঘরবন্দী। তারা সোফায় বসে আয়েস করে খোই ভাজা খায় আর টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে। সৈকতে,ঝাউবনে, টং দোকান, ঝুপড়ি ঘর ফাকা।রূপসী অপ্সরাদের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে পাথর হতে চল্লো রোমিও রা।


মেয়রের বৈকালিক হাটা পথ কাদায় কদাকার, সফেদ পাঞ্জাবি পায়জামার সুয়েরেজের ময়লার আস্তরণ। বেরসিক নাগরিকের মেয়রের এমন দুর্দশা পূর্ণ অবস্থার ছবি তোলে নাগরিক যন্ত্রণার কথা লিখে পোস্ট করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  ভুল উচ্চারণে টিভি লাইভ চলছে,এ যেনো কাদা শিল্পের কোলাজ চিত্র।
খানেকা শরিফের  এক মজনুন চিৎকার করতে করতে পৌর মাঠে এলো,মটের এক ধ্যানি যোগী হন্তদন্ত হয়ে এলো মাঠে। তাদের দেখাদেখি উৎসুক পথচারী, বাউল,সন্যাসী,ভবঘুরে, বেশ্যা, স্কুলগামী শিশুকিশোর সমস্বরে আওয়াজ দিলো  মেয়র ফিরিয়ে দাও আমাদের কবি কে।কেউ একজন চিৎকার করে বল্লো লুটের এই নগরে কবি থাকবে কিভাবে, তাই কবি নিরবে চলে গেছেন শাহ জালালের মাজারে।শিশুরা হাউ মাউ করে কেঁদে বল্লো আংকেল আংকেল আমরা বৈরাগীর গল্প শুনি, খেলা করি
কবিকে ফিরিয়ে দাও।অতিষ্ঠ ভেপসা গরম,গুটি গুটি বৃষ্টি তে সবাই চিৎকার করলো আমরা কবিকে চাই।এক কমিশনার কবি তোমাদের কি দেয়,আমিই তোমাদের পাশে থাকি, সাথে সাথে এক দেহজীবী ভেংচি কেটে বল্লো গতরাতের টাকা দেয়নি,তিন জনে করিছে।


নগরে বৃষ্টি ভেপসা গরম কাদা পোকামাকড় জনউদবিগ্নতায় মানুষের সীমাহীন কষ্ট লাগবে শাহ বাবার অলৌকিক হুকুমে অতঃপর ফিরে এলেন কবি। ঘিরে রাখলো জনতা কবিকে।থেমে গেছে বৃষ্টি।
কবি কিছুক্ষণ পর বল্লেন আমি আপনাদের কাছে ফিরিনি,আমি ফিরে এসেছি ঐ-যে দেখছো স্কুলব্যাগ কাঁধে তোমাদের সন্তানের জন্য।আমি ফিরিছে তাদের অনাগত সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। হয়তো আমার আবারো ফিরে যেতে হবে,এসেছি দু'দিনের মুসাফির হয়ে। সাথে সাথেই আবারও আর্তনিনাধ উঠলো পৌর ময়দানে, কবি বল্লেন বৃষ্টি তো গেলো আসছে চরম উত্তরীয় শৈত্যপ্রবাহ, হাড় কামড়ানো শীত।
এতক্ষণ চুপচাপ ঝিমমেরে থাকা মজনুন মাস্কান রেগেমেগে কবিকে বল্লেন মানুষই যদি না বাঁচে তোমার শায়েরী কে শুনবে, কেইবা গাইবে তোমার গান।
২জানুয়ারী ০১৮।