মেয়ে হওয়ার জ্বালা
মানিক চন্দ্র গোস্বামী


পনেরো বছর পার হয়ে গেছে
বধূর বেশে যেদিন,
পা রেখেছিলাম স্বামীর ঘরে,
বেজেছিল মনে বীণ।
ঠাঁট-বাট  আর ঐশ্বর্য্যের
যুগলবন্দী সুরে,
সুখের দোলায় সোনালী সেদিন
ভাসতো স্বপ্ন ঘিরে।
এত সুখ আর সহ্য হলো না
বাপ-মা মরা মেয়ের,
বিমুখ বিধাতা ফেরালেন মুখ
সদ্য হওয়া মায়ের।
জানা নেই মোর কোন অপরাধে
ঘরেতে হলো না ঠাঁই,
স্বামীর হাতের ধাক্কার জোরে
রাস্তায় এসে যাই।
চোখের সামনে সেই যে সেদিন
বন্ধ হলো দ্বার,
সন্তান কোলে মায়ের চোখে
নামলো অন্ধকার।
সেদিন থেকেই আস্তানা হলো
শহরের ফুটপাত,
শুরু হলো ভিক্ষাবৃত্তি,
পেটে তো লাগবে ভাত।
সময় তো আর থাকে না বসে,
পার হয়ে যায় দিন;
কয় বছরেই অর্ধাহারে
শরীর হয়েছে ক্ষীণ।
হয়তো বা কোনো মহারোগে আজ
শরীর জর্জরিত,
শক্তি হারিয়ে মনে-প্রাণে তাই
হয়ে গেছি বড় ভীত।
মেয়েটাও তো ডাগর হয়েছে,
সাবধান বাণী ছাড়া,
কি আর পারি করতে বলো,
চারিদিকে পিশাচেরা।
শ্বাপদের মতো দৃষ্টি রেখেছে,
সুযোগ খুঁজিছে সদা;
বাগে পেলেই ছিঁড়েকুরে খাবে,
ভয় হয় সর্বদা।
মা হওয়ার যে শাস্তি বড়ো,
নরকের সমাজেতে,
নিজেকে নিয়ে চিন্তা করিনা,
মেয়ে থাকবে তো বেঁচে রাতে?