অনুমতি


দেখতে দেখতেই পার হয়ে গেল চার চারটে দশক
আমি ভুলে গেলেও  অনেক কিছুই
সযত্নে  ধরে রাখে স্মৃতি ।
সেদিনের সেই খেলার মাঠ, পড়ন্ত বিকেল
কিছু অনার্য চাওয়া, কিছু  প্রাপ্য হতাশা
অবুঝ কালের  অঘোরী সাধনা
সব লেখা আছে ।


কিছু লাজুক স্বপ্ন অবশ্যই ছিল
তবে শৈশবেই  মারা যেতে পারে বলে
রুক্ষ্ম মাটিতে চারাগাছ পুঁতিনি।


কোনোদিন তোকে চিঠি লিখিনি ।
ইচ্ছে যে কখনো হয়নি তা নয়
হৃদয়ে বাস করে এক
নির্জন প্রতীক্ষা বাঙ্ময় ।


সেদিনের শুক্লা দ্বাদশীর ফুটন্ত  চাঁদ
সাতশো পূর্ণিমা পরিক্রমা করে
জীবনের পরিপূর্ণতার আবেশে
ছড়ায় প্রবীণ  স্নিগ্ধতা ।


শুনেছি,
তোর  আজকাল আয়নাকে
নাকি ভয় করে  ।


রঙ করে লুকিয়ে রাখা
তোর দুচারটে  ধুসর গোধূলি চুলে
লেখা সেদিনের উদাসীনতা ।


আয়না মিছে কথা বলে না ।


সুখের হোক বা না হোক
স্মৃতি খুব আদুরী ।
ঢলে পড়া জীবনের
অবসর সময়ের ব্যপ্ত সঙ্গীত ।


অর্ধ শতাব্দী পার করে এসে
যখন বানপ্রস্থের যাত্রার জন্য প্রস্তুত
দেখি এক অনাহূত ভেনাসের প্রতিমূর্তি  
তার দুহাত বাড়িয়ে
জন্মান্তরের কোনো
ভুলে যাওয়া দাবী নিয়ে
দাঁড়িয়ে আমার দ্বারে ।
দুটো চোখে তার মন্বন্তরের আকুলতা
আমি পারি না ফেরাতে তারে ।


গ্রহণ করতে গিয়ে দেখি
স্মৃতির পর্দা সরিয়ে
উঁকি মারে সেদিনের দ্বাদশীর চাঁদ।


বরাবরই তোর কাছে উহ্য ছিলাম
তবু জানি না কিসের অধিকারে
চারটি দশক পরেও তোর নীরব উপস্থিতি
আমাকে দ্বিধাগ্রস্ত করে ।
প্রশ্ন করি নিজের কাছে
যে সুতো কখনো বাঁধা হয়নি
তাকে ছিন্ন করি কোন অজুহাতে  ?
হলই বা তোর অজানা
তবুও তোর নামে  যে ঘর সাজাতে সাজাতে
কেটেছে এতগুলো বছর
তার দরজাটা এক লহমায় চিরকালের জন্য
তালাবন্ধ করি কী করে ?


মনে হয়,
একটা অনুমতি নিলে ভালো হতো ।
সেদিনের সেই লাজুক অনুভুতিগুলো তাই
কলমে ভরে  চিঠি দিলাম ।
হেমন্তের উদাসী হাওয়ায়
ভাসিয়ে দিস না ।
এবারের মত উত্তর দিস ।