বিসর্জন


আপন ভুবনে মনের আঙিনায়
বেঁধেছিনু যে কুঁড়েঘর,
বহু সাধনার বলে আপন হাতে
করেছিনু তৈরি তাহা
ছিল না কোন ভয় ডর।
ভুলেও কি কভু ভেবেছিলাম মনে
সহসা সেখানে বায়ু সম্রাট আসিয়া
করিবে ছারখার হইবে একাকার।


বন্ধুর পথ যাত্রী শ্রান্ত পথিক আমি
বড় সাধ ছিল মনে,
ওগো কেমন আছ তুমি দুয়ারে দাঁড়ায়ে
বিমোহিত চোখে জিজ্ঞাসিবে মোরে।
কোমল পরশে উষ্ন আদরে
শুধাইবে মোর সোহাগী প্রিয়া বধু
বসে ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে।


ব্যাকুল মানস অধীর আগ্রহে
প্রতীক্ষা করেছিনু তার,
কে গো সেই কুল লক্ষি ভবে
পাতিয়া আঁচল পুজিবে মোরে।
ভিরু ভিরু আঁখি সলাজ বদনে
চকিতে বিছায়ে কেশগুচ্ছ ভালে,
কল্যান মাগিবে দেবতার দ্বারে।
কাঁদিবে সে প্রভুর চরনে
যখন রজনী হইবে দ্বীপ্রহর।
যেমন ছিল পতি ভক্তি সাবিত্রী সীতার।


আমি খুঁজিয়া ফিরি তারে
স্বপ্নালোকে মল্লিকা মালা
পারবে আপন গলে।
বিরহ ব্যাথার যুগল চক্ষু
উঠিবে প্লাবন উষ্ন চোখের জ্বলে।
বিনাইয়া কহিবে ওগো সাথী মোর
কেন কাঁদ তুমি বসিয়া কুড়েঘরে।
চেয়ে দেখ তুমি ফিরে এসেছি আমি
এসেছি তোমার দ্বারে
তুমি খুঁজিয়া ফিরিছ যারে।


সেদিন চলে গেছে এদিনের পাছে
যেদিন আমি পেয়েছিলাম তাঁকে
ক্ষনিকের তরে কাছে।
পশ্চিম গগনে দিবাকর তখন বসিয়াছে পাটে,
সহসা যাহা পড়িল চোখে
বনফুল কুড়ায় অঞ্জলি পাতি,
অনোন্য এক ষোড়শী কন্যা
সমুদ্র তটে কুঞ্জবনে।
কোন কুল লক্ষি তম্নয় হয়ে
ফুল নিছে কুড়ায়ে কাহার লাগি
চকিতে জাগিল মনে।


ভ্রম ভাঙিল মোর কিছু কাল পরে,
যখন সেই কুল লক্ষি তব
দিয়াছে ধরা মোর বাহুডোরে।
এতকাল যাকে পুঁজিয়াছি মনে
স্বপ্ন রানী উর্বেশী বেশে
ধরা দিল বিরহী আঙিনার কুড়েঘরে।


একদিন দুজনে ঘুরেছিনু বনে
এক জোড়া কপোতীর মত,
অসীম আকাশ পাড়ি দিয়ে যেন
বসেছিলাম সাগর কুলে বালুচরে।
সেদিন বলেছিল মোর স্বলাজ প্রিয়া
হাত দুটি ধরে গভীর কালো নয়ন মেলে,
ওগো সাথী মোর সহে না যে দেরি
তোমার বিহনে বিরহ ব্যাথায়
তিলে তিলে মরি যে আমি।


স্বাক্ষি রেখে বিধাতা প্রভুকে
চল না মোরা পৃথিবীর পথ ধরি।
যে পথে রয়েছে প্রেম রসে
সঞ্জীবীত প্রতিটি নর নারী।
যাব মোরা মিলে খোলা দিল মনে
সেই চীর আকাংখিত পথে,
দুজনে মিলে জীবন তরীর
ছোট্ট সংসার গড়ি।


হঠাত্ দেখা দিল কলো মেঘ ঐ
দক্ষিন কোনের নীল আসমানে,
অশান্ত বায়ু মুর্ত হইয়া
ফুলিয়া উঠিল দুলে,
কড় কড় রবে বিজলী বাতি
ধ্বনিত হল আকাশ পথে।
গুরু গর্জন সমুদ্র বক্ষ
শো শো বেগে ছাপাইল কিনার
এক প্রহরের প্রমোদে।


হাত ধরাধরি করি ছুটে চলি দুজনে
তীর বনভূমি পাড়ে,
সহসা এক প্রকান্ড ছোবল
রদ করিল মোরে।
চাহিয়া দেখি ঐ দুরে দেখা যায়
মোর প্রিয়া জ্বলে ভেসে যায়,
সোনালী কেশ ভাসিছে রাশি রাশি।
কাঁদিলাম আমি চীত্কার করি
ডাকিলাম সাথী সাথী,
কোনদিন সাথী ফিরিবে না আর
বল প্রভু এ মহা সত্য
কিভাবে আমি মানিয়া লইতে পারি।


হায়রে মানসী প্রিয়া ছিল স্বপ্ন তোমার
আপন হাতে সংসার গড়িবার,
অকালে তুমি শেষ করে দিলে
তোমার সাজান বাড়ি ঘর।
আমার চিতায় আমি জ্বলি
তোমার চিতায় তুমি,
বধুর অভাবে ঘুনে ধরিবে তাহা
ধসিয়া পড়িবে জানি।
সকলের আজান্তে জ্বলিবে ধিকি ধিকি
জ্বলিবে জনম ভরি।