মৃত্যু উপাখ্যান


একদা তুমি এসেছিলে ভুবনে
সদ্য ফোটা পুস্পরুপ নিয়ে।
আপন সংসারে ছিলে তুমি মানিক রতন
লতাগুল্ম তারকারাজি দেখেছে ত্রীভুবন।


কত যে প্রতিভা ছিল তোমার
ভাবি অন্তরালে
নিষ্ঠুর নিয়তী পরাভূত করেছে
কালের কড়াল গ্রাসে।


অসীম স্বপ্ন স্বসীম সময়
হৃদয় দিয়েছে দোলা
প্রভাত কালে ঝরিয়া পড়িল
সমাধি করেছ খোলা।


দারুণ অভাব গ্রাসিয়াছে তোমায়
দেখুক দেবী ধরিত্রী
আকন্ঠ বিমারীতে ভুগিতেছিলে তুমি
সদ্য শিশু অবধি।


অভাবের যাতাকলে পিষ্ট তুমি
করিবে কি অসীম যাত্রা
বুঝেনি বিবেক জাগেনি চেতনা
চলার ছিল না কোন মাত্রা।


অন্তিম শয্যায় জর্জরিত হৃদয়
ছল ছল আঁখি জল
করুন চোখে ভাষাহীন কান্নায়
হৃদয় ছিল টলমল।


অপলক চোখে মিনতি ঝরিয়া
বলিত খোদার দরবারে
ওগো প্রভু একি লীলা খেলা
সহিবার শক্তি দাও মোরে।


বলিতে তুমি আক্ষেপ করে
অনেক তিতীক্ষা ভরে
ও দয়াল প্রভু কিসের আশায়
সৃষ্টি করেছ মোরে।


করিলে যদি সৃষ্টি পোড়ালে কেন তুমি
তব আত্মার আহূত ছাতি
তিল তিল করে সমাধিস্হিত হব
নাই কি  কোনই গতি ?


এমনি করিয়া বাক্য আলাপে
সেবিছে ঈশ্বর
মথুরা পাখি স্বর্গ গমনে
দেহ হইবে নশ্বর।


রোদন বাক্যে কায়মনে দহে নিভৃত নির্জনে
আচিনপুরে অতিথি হবে সে ভাবিনি কোন কালে।
এমনি করিয়া একে একে বহু দিন করিল গুজরান
সন্ধ্যার আঁধার ঘনায়ে এলো ক্রমে
গোধুলি লগ্ন ভাসমান।


বিলাপ সাগরে ভাসিবে তরী উত্তাল তরঙ্গ দরিয়ায়
পঞ্চ সাধক জানিত কি তথায় হবে বিশ্ব মহা প্রলয়।
মায়ের যাদু আমাদের দাদু গমনিল চিকিত্সালয়
মন্থর গতিতে মলিন বদনে শয্যা নিল বিছানায়।


দাদুকে বুঝি বিদায় করিলাম দারুন শক্ত যমঘরে
যমদুত আসিয়া ছিনিয়া নিল তারে রাগত রোষানলে।
লক্ষি দাদু চশমা আটিয়া বসিত বিনম্র বিনয়ী স্বভাব
প্রকৃত ভদ্র মানুষ জ্ঞানে সেথা ছিল না কোন অভাব।


সোনার দাদুর হাসির ফোয়ারায় ঝরিত মুক্তা অবিরাম
মহা তাপসীর তপস্যা যেমন হইত না কখন বিরাম।
নিটোল মেরুদন্ডের সুকোমল চলন রাজকীয় ভাবধারা
আপত দৃষ্টে কে বলিবে তাকে রোগাক্রান্ত অপয়া।


ভাষা ভাষা নয়ন হরিণী চোখে ছিল কত উচ্ছাস
তিল তিল করে শুদ্ধ হয়েছে দাদু নেই কালিমা নির্যাস।
কমলকান্তি ওষ্ঠ রক্তিম আভা যেন ফুটন্ত রক্ত জবা
রাজপুতনার রাজপুত যেন পরিবেশ করেছে হাবা।


এমনি রঙে রঞ্জিত দাদু গোলাপ রঙের ছবি
রঙিন রাজ্যের রাজা হত সে দেখিত যদি কোন কবি।
হায়রে নসীব সেই দাদুকে করিল হরন রাক্ষুসে রাহু
দন্ত বিকশিয়া কাড়িয়া নিল যমরাজ তাহা
প্রসারিত মহা বাহু।


সোনার প্রতিমা আদুরে ভ্রাতা মায়ের নয়ন মনি
চীর নিদ্রায় নিদ্রিত রয়েছে থাকিবে জনম ভরি।
শোক সাগরে ভাসিয়ে তুমি কোথা রয়েছ অন্তর্ধান
শোকাকিভুত আমরা সবাই বাচিব কিভাবে
বলে দাও হে মহাপ্রান।


কাঁদে আকাশ কাঁদে বাতাস কাঁদে ভগ্নি ভ্রাতা
জননীর কান্নায় ঝরে বৃক্ষের পাতা ঝরে তরুলতা।
দক্ষিনে পদযুগল উত্তরে শিয়র পশ্চিমে কাবামুখি মুখ
লোবান শাবানের খুশবু মাখিয়া নতুন সন্ধানে উম্মুখ।


পরজগতের মেহমান তুমি ঈশ্বর করেছে নিমন্ত্রণ
সময় শেষে প্রতি নরনারীর যেতে হবে চীরন্তন।
সাদা চাঁদরে মুরো দিয়ে তুমি থাকিবে মাটির তলে
তোমার সৃতী পরিয়া কন্ঠে বাচিব মোরা এই ভুবনে।
হে দয়াল প্রভু ধরনী পালক বিশ্ব করতার
দাদুর বরাতে থাকে গো যেন জান্নাত
তোমা মহিমা যে অপার।