গযল সনেট আঙ্গিকের প্রেম-উপজীব্য দার্শনিক কবিতা। শিকড় সিরাজের ফার্সি সাহিত্যে। উর্দু কবিদের হাতে চরম উৎকর্ষতা ঘটে হিন্দুস্তানে। মুসলিম শাসনের শেষ দিনগুলোতে চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও উর্দু – বিশেষ করে উর্দু-গযলের উত্থান ছিলো সত্যি বিস্ময়কর। এ যেন একটি সাম্রাজ্যের বিদায়কালে তার পরবর্তীদের জন্য রেখে যাওয়া ‘রত্ন উত্তরাধিকার’। খসরু থেকে শুরু, আর গালিবের অসামান্য গযলকারিতার তালে তালে গৌরবজনক পরিণতি।


        অতি উচ্চাঙ্গের ভাবসম্বলিত দুরূহ শৈলীতে পারঙম ওস্তাদ-শায়ের - বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কবি - মির্যা আসাদুল্লাহ খাঁ গালিবই (জন্মঃ আগ্রা, ২৭শে ডিসেম্বর,১৭৯৭ - মৃত্যুঃ দিল্লী, ১৫ই ফেব্রুয়ারী, ১৮৬৯) হচ্ছেন উর্দু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। শুরুটা নিষ্কন্টক ছিলনা। দিল্লীর শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর কেন্দ্রিক 'লাল-কিলা'-র কবিতা আসরে তার শক্ত প্রতিপক্ষ ছিলেন স্বয়ং সম্রাটের ওস্তাদ ও তৎকালীন সভাকবি শেখ মোহাম্মদ ইব্রাহীম যওক্ব। ১৮৪১-এ উর্দু দীওয়ান এবং ১৮৪৫-এ ফার্সি দীওয়ান প্রকাশিত হওয়ার পর উর্দু ও ফার্সি সাহিত্যে তার শ্রেষ্ঠত্ব সন্দেহাতীত ভাবে স্বীকৃত হয়ে যায়। ‘নাজমুদ্দৌলা’, ‘দবিরুল-মূলক’, ‘নিযামে-জঙ্গ’ খেতাবে ভূষিত করে, ১৮৫০ খৃস্টাব্দে, সম্রাট জাফর শাহী দরবারে একজন সম্মানিত অমাত্য হিসেবে গালিবকে বরণ করে নেন। ১৮৫৪ খৃস্টাব্দে যওক্বের ইন্তেকাল হলে গালিব তার স্থলাভিষিক্ত হন। ‘পারতাবিস্তান’ নামকরণে তৈমুর শাহী বংশের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব অর্পিত হলে, গালিব ‘মেহের-ই-নীমরোয’ নামকরণে প্রথম খন্ডের কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করেন।


        শেষবিচারে, উর্দু গযল রচনায় শ্রেষ্ঠত্বের কারণেই তার আকাশচুম্বী খ্যাতি। তার গযলের পংক্তিগুলো বাক-চাতুর্যে অসামান্য। দ্ব্যর্থবোধক। এ কারণে উর্দু গযল-সাহিত্যে তিনি ‘মুশকিল পসন্দ’ (master of paradox) হিসেবে খ্যাত হলেও তার ‘দীওয়ান-ই-গালিব’ আজো পাঠকের কাছে সমান চিত্তহারী।