সাদা-কালো দৃশ্যটার মাথায় আছে যুবতী রমনী ছায়ায়
দু’কর্ণ খাড়া করি মায়ায়
গুঞ্জন শোনা যাবে যখন শ্রবণেন্দ্রিয় জুড়াবে তখন
সময় বয়ে যাবে কখন।
অহর্নিশিই এখানে আসি সর্বদা চক্রের মধ্যে ভাসি
সুরেলা যাদুতে দিব্যি হাসি
দু’চোখ ভরিয়ে শুনি গান তাকিয়ে দেখি দিয়ে দু’কান
আনন্দে হৃদয়ে ডাকে বান।
মায়ার বাঁধনে গো গেঁথেছ বৃক্ষতলে এ শয্যা পেতেছ
হৃদ-দুয়ার পুরো খুলেছ
জানালা-বিহীন হৃদ-মাঝে ঠিক সকাল-দুপুর-সাঁঝে
রয় দেয়ালের খাঁজে খাঁজে।
কোনদিন শূন্য বৃক্ষতলে দৃষ্টিতে আমার কষ্ট মেলে
আসনি সেদিন তুমি না-বলে।
মুহুর্তরা বয়ে যায় দ্রুত হৃদয়ে ধ্বনিত স্মৃতি যত
তোমার মদির সুর শত।
কখনো চকিতে বৃষ্টি নামে তোমার সুকণ্ঠ যেন থামে
অব্যক্ত চিঠিরা আসে খামে
সেদিন সুরসিক্ত হৃদয় বৃষ্টিভেজা অবয়বে রয়
অন্তরের দুঃখ-নদী বয়।
সাগরপানে ছুটে সে নদী কোনদিন খুঁজে পায় যদি
পেতে বসে সুখেভরা গদি
বলে দু’দন্ড মনের কথা আনন্দ-আবেশে মেখে তথা
হৃদয়ের অব্যক্ত যত ব্যথা।
যেদিন স্নিগ্ধ বাতাস বয় মমচিত্তে শত দোলা দেয়
মনে জাগে হারানোর ভয়
দোল আর গানের মিলনে কর্ণমুখ কাঁপে শিহরণে
অধীর সে সুর আহরণে।
কতদিন থাকবে দ্যোতনা সুরের সুমধুর বাজনা
ভরে হৃদ-মাঝার মোহনা
জানি না কখন যে কী হয় কতদিন মন আর সয়
সংগীত আধার করে ক্ষয়।
কখনো তুমি উজ্জ্বল রোদে সুর মুর্ছনায় চোখ মুদে
ঢেউ যেন প্রবাহিত নদে
গালের দক্ষিণ পাশ ঘেষে সূর্য্যকিরণ ছড়িয়ে আসে
রক্তিম আভা সেখানে ঠেসে।
ঘেমে ভিজিয়ে স্নিগ্ধ কপোল চোখ তোমার চির চপল
হয়ে সাত রাজার উপল
রোদ্দুরের খরতাপে সব নিস্তব্ধ হয় যত কলরব
থাকে শুধু সংগীতের জপ।
তোমার এই অপূর্ব সৃষ্টি ভুবনবিখ্যাত সব কৃষ্টি
ঝড়ায় মনে আনন্দ বৃষ্টি
সুর শুধু আমারই পন্য ছন্দগুলো রয় মোর জন্য
তুমি তা বিলিয়ে হও ধন্য।
ছোট্ট নদীর নাম সুহলা জলের রঙ তার সুনীলা
ওপারে শস্যক্ষেত সুফলা
বসে তুমি বটবৃক্ষ তলে হরিণী চোখ নদীর জলে
শাপলা-শালুক ঘন ফলে।
হেথা কিশোরী মুচকি হেসে শাপলা-শালুক তোলে ভেসে
জল-কাদায় রযেছে মেশে
ওপাশ তাকিয়ে দেখো তায় রঙিন পাল তোলা নৌকায়
অচেনা গাঁয়েয় বধু যায়।
পাটের মাচায় পা ছড়িয়ে আঁশ ছাড়ে কুড়িয়ে কুড়িয়ে
যুবতীর নোংড়া হাত ভরিয়ে।
মা’র আঁচলের নীচে খোঁজে দুধের শিশু দু’চোখ বুজে
ওমের আরামে মুখ গুজে।
কাছে বাড়ন্ত এক কিশোর ঘুরি উড়ানো সুখে বিভোর
নাটাই-সুতা নিয়ে কাতর
গানের দিকে নেই খেয়াল তার কঠিন রুক্ষ চোয়াল
কাটবে ঐ সুতোর দেয়াল।
চকিতে তোমার ত্রস্ত চোখ বুলিয়ে যায় আমার মুখ
হৃদয়ে জাগে চরম সুখ
তবু সংগীত থেমে যায় না অনন্ত সে সুরের ঝরনা
যেন স্বর্গ সুখের যাতনা।
দু’চোখ তোমার নিশি কালো ভরিয়ে আছ জগতের আলো
আধার রাতে কিরণ জ্বালো
কাকচক্ষু জলপানে চাই তলার কোন হদিস নাই
জানিনা কোথায় আছে ঠাঁই।
রেশমি চুলে দিয়ে চিরুনি দু’ধারে করেছ লম্বা বেনী
অন্তর বলে সামনে আনি
কিশোরী লাগে তোমায় তাতে কাচের চুড়ি পড়েছ হাতে
হৃদয় মোর আনন্দে মাতে।
নেই কোন ছোট্ট নাকফুল কানে পড়নি ঝুমকা-দুল
টিপ দিয়েও কর নি ভুল
ওসব তোমায় না মানায় অলংকার বাহুল্য বাড়ায়
সুশ্রী তুমি কানায় কানায়।
গানই সকল অলংকার ব্যাঞ্জণার জয়জয়কার
দুনিয়াশুদ্ধ করে স্বীকার
প্রকৃতিও যায় মুগ্ধ হয়ে সুললিত সে গানের লয়ে
নিজেকে বশে এনেছে নুয়ে।
গান তেমন বুঝি না আমি রবি-নজরুল ভেবে ভ্রমি
জানে শুধু মোর অন্তর্যামী
তবুও শুনে মুগ্ধ দু’কর্ণ ভাবি কী অতীব দামী স্বর্ণ
উপভোগি শেষবিন্দু বর্ণ।
সংগীত শ্রবণ মোর দায় ছাড়তে পারি না কভু হায়
নিশিদিন যেন ডাকে আয়
তন্ময় হয়ে তাকিয়ে রই শিহরিত ক্ষণে ক্ষণে হই
চির সুখের সবটা লই।
যদি এরপর কোনদিন গান থামে হঠাৎ সেদিন
উতলা করবে রাত্রিদিন।
বসে ভাবব নদীর পারে উদাস দৃষ্টি ফেলে ওপারে
শুধু দীর্ঘশ্বাস বারে বারে।